বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ৮৫ শতাংশ

সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ৮৫ শতাংশ

স্বদেশ ডেস্ক;

করোনা ভাইরাস আবার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৪ জন। একই সময়ে মারা গেছে ৩৯ জন। দেশে গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত ৮৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৪২ শতাংশ। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি মাস থেকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক করোনার সংক্রমণ হার ছিল ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে। বাড়তে বাড়তে সংক্রমণের হার গত ২৪ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রথম ৩ জন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। এর পর যতদিন যেতে থাকে ততই করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। মে-জুন-জুলাইয়ে করোনার সংক্রমণের সর্বোচ্চ (পিকটাইমে) চূড়ায় পৌঁছায়। ওই সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার শনাক্ত হয়েছিল এবং মারা গেছে ৫০ জনের বেশি। নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ। এর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে সংক্রমণ হার ১০-১১ শতাংশে নেমে আসে। তবে নভেম্বর আবার বাড়তে শুরু করে এবং জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ হার ৩ শতাংশের নিচে অবস্থান নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গেল সপ্তাহে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলতি মাসের ২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ১২তম এপিডেমিলজিক্যাল সপ্তাহ হিসেবে গণ্য করে। এ সপ্তাহে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ১০০ জন। একই সময়ে মারা গেছে ২০১ এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ২০৪ জন। এর আগের এপিডেমিলজিক্যাল সপ্তাহে অর্থাৎ ১১তম সপ্তাহে ১৪ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১২ হাজার ৪৭০ জন। একই সময়ে মারা গেছে ১৪১ এবং সুস্থ হয়েছিল ১০ হাজার ৪০৮ জন।

সাপ্তাহিক তুলনামূলক চিত্র বলছে, দেশে ১১ সপ্তাহের তুলনায় ১২ সপ্তাহে ৩৯ হাজার ১৭টি নুমনা বেশি পরীক্ষা করা হয়। ওই সময়ে নতুন রোগী ১০ হাজার ৬৩০ জন বেশি শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৬০৩ জন বেশি মারা গেছে এবং ২ হাজার ৭৯৬ জন বেশি সুস্থ হয়েছে। ১১ সপ্তাহের তুলনায় ১২ সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা ২৭ দশমিক ৯৪, শনাক্ত ৮৫ দশমিক ২৪ ও মৃত্যু ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সুস্থতা ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে সংক্রমণের পরিস্থিতির পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হয়। ওই মাসে শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর পর এপ্রিলে শনাক্তের হার ১২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ; মে ১৬ দশমিক ১৬; জুন ২১ দশমিক ৪৯; জুলাইয়ে ২২ দশমিক ৪৬; আগস্টে ২০ দশমিক ১৭; সেপ্টেম্বরে ১২ দশমিক ৭০; অক্টোবরে ১১ দশমিক ৩৮; নভেম্বরে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৬ এবং ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

দেশে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজারের বেশি করোনা শনাক্ত এবং আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ জন মারা যাচ্ছে। অথচ করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও সচেতনতা নেই। সংক্রমণের প্রথমদিকে এ ভাইরাস নিয়ে দেশের মানুষ অনেক সচেতন ও ভয় থাকলেও এখন সেটি কমে গেছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই হাটে-বাজারে যাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে, চা-সিগারেট খাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শীতকালে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা ছিল, কিন্তু বাড়েনি। শীতে সংক্রমণ না বেড়ে, গরমে করোনার সংক্রমণ কেন বাড়ছে তা খুঁজে বের করতে গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

করোনা মোকাবিলায় গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ডা. আবু জামিল মো. ফয়সাল বলেন, করোনার সংক্রমণ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এটি ৩-এর নিচে নেমে এসেছিল। মার্চ থেকে আবার বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, কিন্তু মানুষ মানছে না।

ডা. আবু জামিল মো. ফয়সাল বলেন, সরকার মাস্ক পরার কথা বলছে, কিন্তু মানুষ পরছে না। মানুষকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। সারা দেশে করোনার টেস্টিং কার্যক্রম বাড়াতে হবে। টেস্টিংয়ে যাদের পজিটিভ পাওয়া যাবে তাদের চিকিৎসা ও আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের খুঁজে বের করে পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এটি সরকার বা জনগণের একার পক্ষে সম্ভব হবে না, একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিতে হবে।

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩৬৮৭ জন, মৃত্যু ৩৯ জন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৬৬৪টি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৭ জন। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮০৬ জন। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৯৭১ জন। গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর কয়েকদিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল শনিবার সারা দেশে টিকা নিয়েছে ৬৫ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে ২ জনের শরীরের মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পরই সুরক্ষা প্ল্যাটফরমে টিকার নিবন্ধন শুরু করা হয়। ওইদিন থেকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ৬৮ জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877