শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

টিসিবির পণ্য কিনতে বাড়ছে ভিড়

টিসিবির পণ্য কিনতে বাড়ছে ভিড়

স্বদেশ ডেস্ক:

রমজানের মাসখানেক আগেই বেড়ে গেছে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি); বাড়িয়েছে পণ্য বিক্রির পরিমাণও। বাজারের ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের ভিড় আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। ফলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।

গতকাল রাজধানীর মুগদা এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে দেখা গেছে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। সকাল থেকেই শতাধিক মানুষের ভিড় দেখা গেছে এখানে। কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধসহ সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ দিনভর বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্রেতা কম দামে সয়াবিন তেল কিনতে ভিড় করেছেন এখানে।

মো. আবু হানিফ নামের একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে এখন বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকারও বেশি দামে, সেখানে টিসিবির ট্রাকে পাচ্ছি মাত্র ৯০ টাকা দরে। মূলত তেল কিনতেই গরমের মধ্যেও কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তা ছাড়া চিনিসহ অন্যান্য পণ্যও অনেক কমে পাওয়া যাচ্ছে। এটি আমাদের মতো অল্পআয়ের মানুষের জন্য অনেকটা স্বস্তিদায়ক। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী

ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ১৭ মার্চ থেকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। গত রবিবার থেকে তেল বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়েছে সংস্থাটি। বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে ভোজ্যতেল পাওয়া যাওয়ায় ইতোমধ্যে টিসিবির এ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। কম দামে তেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দরিদ্রদের পাশাপাশি দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন অনেক সক্ষম ক্রেতাও। সরেজমিন রাজধানীর মুগদা, খিলগাঁও, ঝিগাতলা, ফার্মগেট ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এসব পয়েন্ট থেকে একজন ভোক্তা প্রতিকেজি চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ কেজি কিনতে পেরেছেন। পাশাপাশি প্রতিকেজি মসুর ডাল ৫৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি এবং সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ৯০ টাকা দরে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি ১৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে টিসিবি। সারাদেশে চারশটি ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে এসব পণ্য।

ঝিগাতলা এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ৫ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ কেজি চিনি কিনেছেন মো. রাইসুল ইসলাম। কথা হলে তিনি জানান, বাজার করতে বেরিয়েছিলাম। টিসিবির ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়ালাম। কারণ এখানে তেলের দাম অনেক কম। মাত্র ৯০ টাকা লিটার দরে ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনলাম। পাশাপাশি চিনি ও ডাল কিনেছি।

এদিকে সস্তায় পণ্য পাওয়া গেলেও এসব বিক্রয়কেন্দ্রে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সরেজমিন বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর কোথাও কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ ক্রেতারই নেই। তা ছাড়া লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্বের বালাই। একজনের গায়ে গা ঘেঁষে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। লাইনের শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নেই কোনো উদ্যোগ।

যাত্রাবাড়ী এলাকার টিসিবির ট্রাকের সামনেও বিপুল মানুষের ভিড় দেখা গেছে। একজন ক্রেতা মো. আজিজ হাওলাদার বলেন, ‘দুপুরের দিকে মানুষ কম, কিন্তু সকালে অনেক ভিড় থাকে, ঠেলাঠেলিও হয় কখনো কখনো। বাজার এলাকা, এখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি-টিধি মানে না ভাই। কম দামে জিনিস পাইলেই হইল। মানুষ খেতে পায় না, তার আবার কিসের করোনা।’

মাস্কবিহীন এক ক্রেতা মো. রাসেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক ছিল, কিন্তু ছিঁড়ে যাওয়ায় তা ফেলে দিয়েছি। আরেক ক্রেতা মো. রিজিয়া আক্তার বলেন, লাইনে এত মানুষ আর ঠেলাঠেলি যে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। পরিস্থিতি ঠিক রাখারও কেউ নেই এখানে। এভাবেই চলছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, করোনায় মানুষের আয় অনেক হারে কমেছে। অনেকে বেকার হয়েছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে তা ভোক্তার পকেট কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সরকার ভোজ্যতেলের যে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে তা কজনার পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে বাজারে খোলা তেলের দামও এখন বোতল তেলের দামের সমান প্রায়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই টিসিবির কম দামের পণ্যে মানুষ ভিড় করবে- এটিই স্বাভাবিক।

টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে পলাশ আরও বলেন, এমন সময় টিসিবির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে দেশে এখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তাই যেখানেই ভিড় হবে, সেখানে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এর বিকল্প নেই টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে দিনভর মানুষের ভিড় থাকে। অথচ স্বাস্থ্যবিধির অভাবে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। মাস্ক পরিধানসহ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দরকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

পাশাপাশি টিসিবিকে আরও আধুনিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, টিসিবি পেঁয়াজের মতো অন্যান্য পণ্যগুলোও অনলাইনে বিক্রি করলে ট্রাকের সামনে ভিড় অনেকখানি কমে যেত। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমত।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে জানান, রমজানের কারণে টিসিবি এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া সম্পন্ন করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ পণ্য বিক্রি চলছে। আগে যেখানে প্রতিট্রাকে ৫০০ লিটার তেল বিক্রি হতো এখন সেখানে ১ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন থেকে সারাদেশে চারশটি ট্রাকে করে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজও বিক্রি করা হবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। তবে রমজান উপলক্ষে ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত সারাদেশে ৫০০টি ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে এ চার পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877