মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন

ভোটের লড়াইয়ের আগে চলছে কথার লড়াই

ভোটের লড়াইয়ের আগে চলছে কথার লড়াই

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে দুই প্যানেলের লড়াই। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের এই শীর্ষ সংগঠনের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে আগামী ৪ এপ্রিল ভোটগ্রহণ। ভোটে পুরনো দুই প্যানেলে ভাগ হয়ে মাঠে নেমেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। বর্তমান সভাপতি ড. রুবানা হকের প্যানেল ‘ফোরাম’ নামে এবং সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘সম্মিলিত পরিষদ’ নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

এ দুই প্যানেলের বাইরেও ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ‘স্বাধীনতা পরিষদ’ নামে আরেকটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এটি শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে। বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেলের অর্থাৎ ফোরামের নেতৃত্বে তিনি ছাড়াও আছেন হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া। অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে আছেন জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ফারুক হাসান।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সমিতির ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য দুই প্যানেলের ৩৫ জন করে ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মার্চ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পর থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছেন উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা। চলছে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান। এদিকে ভোটার তালিকা ও ভোটগ্রহণের স্থান নিয়ে দুই প্যানেলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনের মাঠ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৪ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একযোগে ভোটগ্রহণ চলবে ঢাকায় হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু এবং চট্টগ্রামে বিজিএমইএর আঞ্চলিক কার্যালয়ে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৫৩ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬১ ভোটার রয়েছেন।

এদিকে ‘সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন’-এর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান সামনে রেখে ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পরিষদ নামের নতুন প্যানেল গঠন করেন ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আসন্ন নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি প্যানেলসহ সম্মিলিত পরিষদে যোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, আমার মূল দাবি ছিল সমঝোতার মাধ্যমে নয়, নির্বাচন যেন হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। বেশ কয়েক বছর ধরে সমঝোতার মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন এটিই ছিল আমার দাবি। যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তাই সম্মিলিত পরিষদের সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে ওই প্যানেলের সঙ্গে জোট করে এবার নির্বাচন করছি। এবারের নির্বাচনে স্বাধীনতা পরিষদ থেকে কেবল জাহাঙ্গীর আলমকেই জোটের প্রার্থী হিসেবে রেখেছে সম্মিলিত পরিষদ।

এর আগে গত মাসের শেষে গুলশানে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ফারুক হাসানের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের সময় বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের বিরোধিতার কথা জানিয়েছিলেন এ প্যানেলের সমন্বয়ক বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ অন্য নেতারা।

আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে কোনো ভয়ভীতির শঙ্কা নেই। বায়োমেট্রিকের কোনো সুযোগ না হলেও এটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কারও নমিনেশন পেপার ছিনিয়ে নেওয়া হবে না, সবাই নমিমেশন পেপার কিনতে পারবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেকেই কটু মন্তব্য করছেন। আপডেট ছবিসহ ভোটার তালিকা করা এবং ডিজিটাল ভোটার আইডি কার্ড বা বায়োমেট্রিকের কথা বলা হচ্ছে। তবে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই সেটা এজিএম করে পাস করে আনতে হয়, যেটা বর্তমান বোর্ড করেনি। তাই বায়োমেট্রিকের কোনো সুযোগ নেই।

সম্মিলিত পরিষদের প্রচার দলের সদস্য ফজলে শামীম এহসান বলেন, বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা বাধ্যতামূলক করলে ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে। দেশ-বিদেশে অবস্থান করা একজন ভোটারও যদি এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে আদালতের দ্বারস্থ হন, তা হলে নির্বাচনটাই থেমে যাবে। তাই আমরা বলেছি- গঠনতন্ত্র সংশোধন ব্যতীতে আপাতত এই নিয়ম চালু করা যাবে না।

ফোরাম লিডার শামসুদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতার জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যে ভোটার তালিকা তৈরির কথা ছিল, সেটায় তারা বাধা দিয়েছে। হোটেল র‌্যাডিসনে ভোটগ্রহণের তফসিল হলেও তারা এখন চাইছে উত্তরায় জনমানবশূন্য নির্মাণাধীন বিজিএমইএ ভবনে ভোট করতে। এসব তৎপরতা থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন নিয়ে তাদের খারাপ মোটিভ আছে।

এদিকে সম্মিলিত পরিষদের নেতাদের বিষয়ে ফোরাম নেতারা বলছেন, সম্মিলিত পরিষদের নেতারা বিজিএমইএর পদ-পদবি ব্যবহার করে শিল্পের স্বার্থে কাজ না করে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য ব্যস্ত ছিলেন। তাই তাদের সঙ্গে কিছু মন্ত্রী-এমপি দেখা গেছে। আমরা সম্পূর্ণ শিল্পের স্বার্থ এবং মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় দরকষাকষিতে থাকতে চাই।

এর আগে ২০১৯ সালে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ৩৫টি পদের সবগুলোয় বিজয়ী হয়েছিল। ২০১৩ সালে এ দুই প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্মিলিত পরিষদ থেকে বিজিএমইএ সভাপতি হয়েছিলেন।

ফোরামের প্রার্থী যারা

হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া প্যানেল লিডার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা অঞ্চলে এমজি শার্টেক্সের রুবানা হক, হান্নান ফ্যাশনসের এবিএম সামসুদ্দিন, এজে ফ্যাশনসের আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আমিতি ডিজাইনের শিহাবুদৌজা চৌধুরী, অনন্ত গার্মেন্টের এনামুল হক খান বাবু, দেশ গার্মেন্টের ভিদিয়া অমৃত খান, দিগন্ত সোয়েটারের কামাল উদ্দিন, ড্রেসম্যান গার্মেন্ট মাশিদ রুম্মান আবদুল্লাহ, দুলাল ব্রাদার্সের এমএ রহিম ফিরোজ, এভিটেক্স ড্রেস শার্ট শাহ রিয়াদ চৌধুরী, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিটের মিজানুর রহমান, ফ্যাশন ডটকমের খান মনিরুল আলম, ফ্যান্ডস স্ট্যাইলওয়্যারের এএম মাহমুদুর রহমান, ইমপ্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলের নাফিস উদ দৌলা, কেইলক নিউএজ বাংলাদেশের আসিফ ইব্রাহিম, ম্যাগপাই নিটওয়্যারের মজুমদার আরিফুর রহমান, মানামি ফ্যাশনসের তাহসিন উদ্দিন খান, এমজি নিট ফ্লেয়ারের নাভিদুল হক, নেক্সাস সোয়েটারের রশীদ আহমেদ হোসাইনি, ওডিশা ফ্যাশনসের ইকবাল হামিদ কোরাইশী আদনান, রাইজিট অ্যাপারেলসের মাহমুদ হাসান খান বাবু, সফটটেক্স সোয়েটারের রেজওয়ান সেলিম, সুরমা গার্মেন্টের ফয়সাল সামাদ, ট্রাউজার লাইনের রানা লায়লা হাফিজ, ওয়েগা ফ্যাশন সোয়েটারের মেজবাহ উদ্দিন আলী ও জিসাস ফ্যাশনসের নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে অ্যারিয়ন ড্রেসের মোহাম্মদ আতিক, চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ক্লিপটন অ্যাপারেলসের এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ম্যাগি অ্যান্ড লিজ অ্যাপারেলসের এনামুল আজিজ চৌধুরী, মেলো ফ্যাশনসের শরীফ উল্লাহ, রিজি অ্যাপারেলসের মির্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী, রেন্সকো সোয়েটারের মোহাম্মদ দিদারুল আলম, দ্য নিড অ্যাপারেলসের রিয়াজ ওয়েজ ও উল ওয়ার্ল্ডের খন্দকার বেলায়েত হোসেন ফোরাম থেকে নির্বাচন করছেন।

সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী যারা

জায়ান্ট টেক্সটাইলসের ফারুক হাসান প্যানেল লিডার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকা অঞ্চলে অ্যাডামস অ্যাপারেলসের শহিদুল হক মুকুল, ব্রাদার্স ফ্যাশনসের আবদুল্লাহ হিল রাকিব, ক্লাসিক ফ্যাশনসের শহীদউল্লাহ আজিম, ক্রনি ফ্যাশনসের নীরা হোসনে আরা, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল, ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের জাহাঙ্গীর আলম, ডিজাইন টেক্সট নিটওয়্যারের খন্দকার রফিকুল ইসলাম, এনভয় ডিজাইনের শিরিন সালাম ঐশী, এনভয় ফ্যাশনসের তানভীর আহমেদ, হামিদ সোয়েটারের ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, জেএফকে ফ্যাশনসের কফিল উদ্দিন আহমেদ, লায়লা স্টাইলের ইমরানুর রহমান, মেইকস গার্মেন্টের আশিকুর রহমান তুহিন, মিসামি গার্মেন্টের মিরান আলী, নিপা ফ্যাশনসের খসরু চৌধুরী, পশমী সোয়েটারের মশিউল আজম সজল, সাদমা ফ্যাশনস ওয়্যারের নাছির উদ্দিন, সেহা ডিজাইনের এসএম মান্নান কচি, স্পারো অ্যাপারেলসের শোভন ইসলাম, তরকা ফ্যাশনসের মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, টিআরজেড গার্মেন্টের হারুন অর রশীদ, তুসুকা ফ্যাশনসের আরশাদ জামাল দিপু, ঊর্মি গার্মেন্টের আসিফ আশরাফ, ভিনটেজ ডেনিমের সাজ্জাদুর রহমান মৃধা শিপন ও ইয়াং ফরেভারের রাজীব চৌধুরী।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে এএসআর অ্যাপারেলের এএম শফিউল করিম খোকন, অ্যামেকো ফেব্রিক্সের এম আহসানুল হক, ফোর এইচ অ্যাপারেলের মো. হাসান জেকি, এইচকেসি অ্যাপারেলের রকিবুল আলম চৌধুরী, লেগেসি ফ্যাশনসের তানভীর হাবিব, এনএলজেড ফ্যাশনসের মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রিয়ালের অঞ্জন শেখর দাশ, টপ স্টার ফ্যাশনসের আবসার হোসেন ও ওয়েল ডিজাইনার্সের সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877