রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

বাইডেনের অভিষেকের দিন কী হবে?

স্বদেশ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উন্মত্ত সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পর আগামী ২০ জানুয়ারি নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে। দিনটিকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই, সারা বিশ্বেও লোকজনের মধ্যে নানা ধরনের কৌতূহল, সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কেননা সেদিন দেশটির ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের কথা রয়েছে। এর পরেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিভাষায় এই দিনটিকে বলা হয় অভিষেক দিবস। এটি একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, যেখানে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস শপথ গ্রহণ করবেন।

তবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকেই মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ট্রাম্প কি তাহলে নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন? যদি তিনি রাজি না হন তাহলে কী হবে? ট্রাম্প কি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন?

গত ৬ জানুয়ারি বুধবার ক্যাপিটল হিলে আইনপ্রণেতাদের অধিবেশনের সময় সহিংস হামলার পর এসব প্রশ্ন ও সংশয় আরও জোরালো হয়েছে। অনেকেই জানতে চাইছেন, ২০ তারিখে কী হবে? সেদিন কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটবে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যদি অভিষেক অনুষ্ঠানে আবারও ঝামেলা করার চেষ্টা করে? সেদিনের জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি।

কী এই অভিষেক অনুষ্ঠান?

আনুষ্ঠানিক অভিষেকের মধ্য দিয়ে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের যাত্রা শুরু হয়। আর সেটি অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। এই অনুষ্ঠানে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথ বাক্য পাঠ করেন – ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শপথ করছি যে আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর পরিচালনা করব, সাধ্যের সবটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিপালনে সচেষ্ট থাকব।’

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টকে এই শপথবাক্য পাঠ করান। এই শব্দগুলো উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং এর মধ্যে দিয়েই তার অভিষেক সম্পন্ন হবে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এর পরেই শুরু হবে উদযাপন। শপথবাক্য পাঠ করার পর কমলা হ্যারিস হবেন নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাধারণত এই শপথ পাঠ করানো হয় প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের কিছুক্ষণ আগে।

বাইডেনের অভিষেক হবে কখন?

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ২০ জানুয়ারি। উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার কথা স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টায়। আর জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের শপথ নিতে নিতে দুপুর গড়াবে। দিনের আরও পরের দিকে জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে যাবেন। আগামী চার বছরের জন্য সেটাই হবে তার অফিস ও বাসভবন।

কেমন নিরাপত্তা থাকবে?

প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য এমনিতেই বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আলাদা। ক্যাপিটল হিলে হামলার পর এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

তবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য এবার বাড়তি নিরাপত্তার কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেগুলো এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু বাইডেন যখন শপথ গ্রহণ করবেন তখনো ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা বহাল থাকবে। ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার কারণে রাজধানীর মেয়র সেখানে এই জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ৬ জানুয়ারি যে ডিসি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে তারা ৩০ দিন কাজ করবে। এর অর্থ হলো- প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে ক্যাপিটল পুলিশকে সাহায্য সহযোগিতা করবে এই ন্যাশনাল গার্ড। নিরাপত্তার বিষয়ে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার নিরাপত্তার বিষয়ে কিংবা অভিষেক অনুষ্ঠান নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন নই।’

তবে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত কমিটির একজন সদস্য ও সেনেটর এমি ক্লবাচার (ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় যিনি তখন ওই ভবনের ভেতরেই ছিলেন) বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে ওই অনুষ্ঠানে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন ঘটানো হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সেখানে থাকবেন?

নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি একটি সৌজন্যের বিষয়। এর আগে তিনজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ছাড়া সবাই নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। এবারও প্রচলিত সৌজন্যের ব্যতিক্রম ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, এই অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না। শুক্রবার এই টুইটে তিনি বলেছেন, ‘যারা জিজ্ঞেস করেছেন তাদের জন্য বলছি ২০ জানুয়ারির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না।’

এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিলেও জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি জানান যে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করা থেকে বিরত থাকবেন।

তার কয়েকজন সমর্থক বিষয়টিকে আরও এক ধাপ নিয়ে গেছেন। তারা পরিকল্পনা করছেন বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়, পাশাপাশি ঠিক একই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ভার্চুয়াল অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের। ফেসবুকে এ রকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তাতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ জানিয়েছেন যে ট্রাম্পের সমর্থনে তারা অনলাইনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন সে সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তার স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নিয়ে তাতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট- জন অ্যাডামস, জন কুইন্সি অ্যাডামস এবং এ্যান্ড্রু জনসন তাদের উত্তরসূরিদের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে এগুলোর সবই ছিল গত শতাব্দীর আগের ঘটনা।

মহামারির মধ্যে কীভাবে হবে অভিষেক?

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়ে থাকে। সেদিন তারা উপস্থিত হয় ন্যাশনাল মলে। বারাক ওবামা ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে যেবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন সে সময় প্রায় ২০ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

তবে এবার এই উদযাপন হবে খুবই সীমিত পরিসরে। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের টিম থেকে রাজধানীতে না আসার জন্য ইতোমধ্যেই আহ্বান জানানো হয়েছে। বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস উভয়েই মলকে সামনে রেখে ক্যাপিটল হিলের সম্মুখে শপথ গ্রহণ করবেন। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের আমল থেকেই এই রীতি চালু হয়েছে।

এবার মহামারির কারণে শপথ অনুষ্ঠান দেখার জায়গাগুলোতে স্থাপন করা স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অতীতে এই অনুষ্ঠানের জন্য দুই লাখের মতো টিকেট দেওয়া হতো। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বেড়েই চলেছে, এক হাজার টিকেট দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ থেকে হোয়াইট হাউসের অভিমুখে যে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়, বলা হচ্ছে, এবার সেটা হবে সারা দেশে এবং অনলাইনে।

শপথ গ্রহণের পর সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তার স্ত্রীসহ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে তার স্বামীসহ হোয়াইট হাউসে নিয়ে যাবেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকবে বাদ্যযন্ত্রীদের একটি দল।

জানুয়ারিতে কেন অভিষেক?

যুক্তরাষ্ট্রে সবসময় জানুয়ারি মাসেই যে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়েছে তা কিন্তু নয়। সংবিধানে প্রাথমিকভাবে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ৪ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ থেকে ধারণা করা যায় যে সারা দেশ থেকে ভোটের ফলাফল রাজধানীতে এসে পৌঁছাতে কতদিন লাগতে পারে বলে সে সময় ধারণা করা হয়েছিল।

একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের অফিস ছেড়ে যাওয়ার জন্য এটা ছিল লম্বা সময়। কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণনা আরও বেশি দ্রুত ও সহজ হয়েছে। ফলে অভিষেকের সময়ও বদলে গেছে। ১৯৩৩ সালে সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের সময় এগিয়ে ২০ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877