বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

আমি অস্ট্রেলিয়ান, তারপরও কেন এর প্রমাণ দিতে হবে?

আমি অস্ট্রেলিয়ান, তারপরও কেন এর প্রমাণ দিতে হবে?

স্বদেশ ডেস্ক:

চীনা বংশদ্ভূত অস্ট্রেলিয় নাগরিক অ্যান্ড্রু শেন (ছদ্ম নাম) কাজ করেন দেশটির সরকারি কার্যালয়ে। সম্প্রতি একটি বৈঠকে যোগ দিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর নিজের পরিচয়পত্রট খুলে ফেলেন। এ সময় তার সঙ্গে তার আরেকজন সহকর্মী ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তাকর্মী এসে শেনকে থামিয়ে দেন।

মন্ত্রণালয় ভবনের করিডরে নিয়ে যাওয়া হয় শেনকে। সেখানে তার ছবি তুলে তাকে জিজ্ঞাসাবদও করা হয় পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। শেনের সহকর্মী ছিলেন একজন ককেশান বংশদ্ভূত। কিন্তু তাকে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি। সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বর্ণবাদী আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন ভূক্তভোগী শেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, শেন মূলত চীন বংশদ্ভূত। কিন্তু তিনি যে একজন অস্ট্রেলিয় নাগরিক, তা বুঝতে পারেননি ওই নিরাপত্তাকর্মী। ঘটনার বিষয়টিকে নিয়ে শেন মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে তারা অস্ট্রেলিয়ায় বৈষম্যমূলক আচরণ ও বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্নও তুলেছেন। শেন বলেন, আমি একজন অস্ট্রেলিয়ান। তারপরও কেন আমাকে প্রমাণ দিতে হবে?

বিবিসিকে শেন বলেন, আপনি চীনা বংশদ্ভূত না হয়ে যদি ককেশান- অস্ট্রেলিয় বংশদ্ভূত হন; তাহলে আপনাকে এমন সন্দেহের চোখে দেখা হবে না।

এ ধরনের অভিযোগ শেনের মতো আরও কজন চীনা বংশদ্ভূতের। তারা বলছেন, বিভিন্ন কার্যালয়ে মিটিং বা কোনো আলোচনা যেতে হলে তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে নিরাপত্তার বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এটি অন্যান্যদের চেয়ে কয়েকগুন বেশি সময়। বিষয়টি নিয়ে দেশটির বিরোধী দল, নীতি-নির্ধারক বা সরকারের সমালোচক মহল একেবারেই নিশ্চুপ।

কমিউনিস্ট তকমা সেটে দেওয়ার প্রচেষ্টা

অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১২ লাখের মতো চীনা বংশদ্ভূত বসবাস করেন। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। গত অক্টোবরে দেশটির সিনেট পরিষদে অভিবাসীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কোনো প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই অভিবাসীদের চীনা কামিউনিস্ট পার্টিকে (সিসিপি) পরিহার করার কথা বলা হয়। আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে এমন বিতর্কিত বিষয় উঠে এলে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে সরকার দলীয় সিনেটর এরিক এ্যাবেটজ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কেন প্রশ্ন করা যাবে না?’

বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চায়না পলিসি সেন্টারের পরিচালক ইউন জিয়াং একটি টুইট করেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জনসম্মুখে প্রশ্ন করা নয়, বরং জনসম্মুখে একটি গোষ্ঠীকে হেয় করার উদ্দেশে উত্থাপন করা হয়েছে।’

সন্দেহের কারণ

চীন-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক থাকলেও সম্প্রতি দুই দেশ নানা ইস্যুতে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, চীন তাদের অভ্যন্তরে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর আগে ২০১৭ সালে বিষয়টি নিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিল নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

এর বাইরে চীনে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের গ্রেপ্তার, হংকং ইস্যুতে চীনের একঘেয়েমি এবং শিনঝিয়াংয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চালানো দমননীতি দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা আরও বাড়িয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এসব সমস্যার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত চীনা বংশদ্ভূতদের ওপর এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়টি নিয়ে চাইনিজ-অস্ট্রেলিয়ান কমিনিউটির একজন নেতা শেন লি নিজের মন্তব্যে বলেন, চীন কর্তৃক কিছু মানুষ যে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে, সে শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, এ জন্য সামষ্টিকভাবে সবাইকে তাদের অনুগামী বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা যে দেশটিতে বসবাস করছি, এটি তার প্রতি ভালোবাসা ও মূল্যবোধের পরীক্ষা। জোর করে এর বহি:প্রকাশ ঘটবে না বা পরীক্ষা করে সেটি মাপা যাবে না।

লি আরো বলেন, প্রশ্নে জর্জড়িত করা নয়, পরীক্ষাও নয়; এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিশ্বাস। দেখতে হবে এদেশে চীনা বংশদ্ভূতদের তাদের সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীরা কীভাবে দেখে এবং চীনা বংশদ্ভূতরাও এদেশের আইন ও মানুষকে কীভাবে দেখে। যদি আমরা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মানুষকে বিশ্বাস না করতে পারি, এবং তাদের সঙ্গে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই; তাহলে ভিন্ন দেশের গোয়েন্দা বাহিনী এসে ক্ষতি করার চেয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের ‍উদার গণতন্ত্রকে বেশি মাত্রায় ক্ষাতিগ্রস্ত করবো।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877