শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাজাকারের তালিকা তৈরি, ইতিহাসের এই দাবি পূরণ করা হোক

রাজাকারের তালিকা তৈরি, ইতিহাসের এই দাবি পূরণ করা হোক

বাঙালির হাজার বছরের গৌরবময় ঐতিহ্যের শীর্ষে রয়েছে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ দেশের স্বাধীনতা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। দেশ চলে যায় স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিচার বন্ধ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বানানোর নামে রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়। জনমানসে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয় এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে। আবার শুরু হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের বিচার। সে সময় রাজাকার-আলবদরসহ পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের তালিকা তৈরিরও দাবি উঠেছিল। এবার সেই তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে আইনি কাঠামো তৈরি হচ্ছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের বিধান রেখে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বা আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। বিদ্যমান আইনে এই বিধানটি ছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করা এসব বাহিনীর অনেক সদস্য এরই মধ্যে মারা গেছে। তাদের সবার বিচার করা এখন হয়তো সম্ভব হবে না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার অধিকার প্রজন্মান্তরে বাংলাদেশি সব নাগরিকেরই থাকবে। তারা জানতে চাইবে, কারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল, কারা বুকের রক্ত দিয়েছিল, আর কোন কুলাঙ্গাররা পাকিস্তানিদের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল, নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করেছিল,  মা-বোনদের নির্যাতন করেছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল। রাজাকারদের তালিকা করা হলে ইতিহাসের সেই দাবি অনেকটাই পূরণ হবে। একইভাবে প্রকৃত শহীদদেরও একটি তালিকা করা গেলে খুবই ভালো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বিভিন্ন সময়ে যে অমুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাদের বাদ দিতে হবে। কিন্তু এই কাজ করার সময় কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যেন অসম্মান বা বিড়ম্বনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

আমরা চাই, মুক্তিযুদ্ধের ধারা থেকে বাংলাদেশ যেন বিচ্যুত না হয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার যেন কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877