বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

গ্রহাণু থেকে এলো ‘গুপ্তধন’

গ্রহাণু থেকে এলো ‘গুপ্তধন’

স্বদেশ ডেস্ক:

জাপান আবার দেখিয়ে দিল, মহাকাশ গবেষণায় তারাই আগামীর দিকপাল, অন্তত এশিয়ায়। আরেকটি গ্রহাণু থেকে ‘মাটি’ খুঁড়ে নমুনা নিয়ে এলো মানুষের পৃথিবীতে। বর্তমানে চাঁদের চেয়ে ৩০ গুণ দূরের রিগু গ্রহাণু থেকে হায়াবুসা-২ অভিযানে সংগৃহীত নমুনা অস্ট্রেলিয়ায় এসে পড়েছে। পরিমাণে খুব সামান্য হলেও এটাকে ‘মহাজাগতিক গুপ্তধন’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের পেশাদার বিজ্ঞানবক্তা আসিফ।

রিগু যে দেখতে হীরার টুকরার মতো, হায়াবুসা-২ নভোযানই প্রথম পৃথিবীকে নিশ্চিত করেছিল। ২০১৮ সালের ২৭ জুন যানটি রিগুর গায়ে নেমেছিল। প্রায় এক কিলোমিটার চওড়া গ্রহাণুটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে এক কোটি ১৬ লাখ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। জাপানের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা

জাক্সা ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর হায়াবুসা-২ উড়িয়েছিল। গন্তব্য অভিমুখে চার বছরের যাত্রা এবং রিগুতে দেড় বছরের অভিযান চালিয়ে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর গ্রহাণুটি থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু করে নভোযানটি। সঙ্গে নিতে ভোলেনি সংগ্রহ করা নমুনা।

পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানোর পর নমুনাসমৃদ্ধ একটি বাক্স (ক্যাপসুল) ফেলে দিয়ে নতুন গন্তব্যে যাত্রা করেছেন হায়াবুসা-২। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উমেরায় এসে পড়া বাক্সটি উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট একটি দল।

জাক্সার পরিকল্পনা অনুযায়ী রিগু থেকে ১০০ মিলিগ্রাম নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে জাপানে পৌঁছানোর পর ওই বাক্সটি খুলে দেখার পরই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারবেন ঠিক কী পরিমাণ বহির্জাগতিক নমুনা বয়ে নিয়ে এসেছে বাক্সটি। নাসা অবশ্য অনুমান করেছে ‘সম্ভবত ১০ মিলিগ্রাম’। মানে, এক গ্রামের এক হাজার ভাগের মাত্র ১০ ভাগ, কিংবা পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়ে থাকলে মাত্র ১০০ ভাগ।

এত অল্প পরিমাণ নমুনা নিয়ে বিজ্ঞানমহল অত উচ্ছ্বসিত কেন? প্রশ্ন করেছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক আসিফকে। গতরাতে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘ওটুকু নমুনা পরিমাণে কম, কিন্তু মানে তুচ্ছ নয় মোটেও। এর তাৎপর্য অনেক। এটা যেন মহাজাগতিক গুপ্তধন।’

‘আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যতায় ছুটে চলা আমাদের এই সৌরজগৎ’ গ্রন্থের লেখক আসিফ ব্যাখ্যা করেন, ‘ধারণা করা হয়, গ্রহাণুগুলো সৌরজগতের সৃষ্টিলগ্নের সব রহস্য লুকিয়ে রেখেছে নিজেদের গায়ে-গতরে। তো, ওখান থেকে তিল পরিমাণ ধুলো-বালি কুড়িয়ে আনতে পারাও বিরাট অর্জন। কারণ, ওর ভেতর থেকেই আমরা জেনে যেতে পারব, সৌরজগত সৃষ্টির নকশা। পানিসহ জীবনের দরকারি উপাদানগুলো পৃথিবীতে কীভাবে অত আগেভাগে এসে পৌঁছেছিল, সে জিজ্ঞাসারও একটা অসামান্য জবাব মিলতে পারে এ অতিসামান্য নমুনা থেকে।’

গ্রহাণু থেকে নমুনা পৃথিবীতে আনার ক্ষেত্রে জাপানই প্রথম, এবং এখন পর্যন্ত অদ্বিতীয়। ২০১০ সালে তারা প্রথম নমুনা নিয়ে এসেছিল ইতোকাওয়া থেকে। চাঁদের থেকে পাঁচগুণ দূরে থাকা ওই গ্রহাণু থেকে হায়াবুসা অভিযানে দেড় হাজার ধূলিকণা তুলে এনেছিল জাক্সা।

এ পর্যন্ত মোট তিনটা গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে মানুষ। জাপানের দুটো অভিযানের বাইরে সফল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বেনু নামের একটি গ্রহাণুতে অভিযান চালাচ্ছে। ৩৪ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহাণুর পৃষ্ঠ থেকে ৬০ গ্রামের মতো নমুনা সংগ্রহ করেছে নভোযান ওসিরিস-রেক্স। ২০২১ সালের মার্চে নভোযানটি পৃথিবীর উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করবে, এসে পৌঁছবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877