স্পোর্টস ডেস্ক: দিয়াগো ম্যারাডোনা আর নেই। এটিই সত্য। ফুটবলের জাদুকর। ফুটবলের রাজপুত্র। চোখবন্ধ করে মানুষটির যে অবয়ব সকলের সামনে ভেসে ওঠে তা আর কিছু নয়, মাঠে ছুটে ফিরছেন পায়ে ফুটবল নিয়ে। আর বিশ্ব অবাক তাকিয়ে আছে সাফল্যের চুম্বন কখন আঁকবেন তিনি তা দেখতে।
কিংবদন্তির এই তারকার একটি গোল নিয়ে বিতর্ক ছিল এবং আছে। যে গোল ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিল সোনার কাপ।
মৃত্যুর পরও নানা আলোচনায় সেই গোল প্রসঙ্গ। এই গোল নিয়ে বিতর্কের ঝড় যখন দুনিয়াজুড়ে তখন তারকা এই ফুটবলারের উত্তর ছিল, ‘আমার হেড আর হ্যান্ড অব গডেই গোল’। হেন্ড অব গড সত্যিই যেন এক রূপকথা।
১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দিয়েগো মারাদোনার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত গোল নিয়ে আলোচনার শেষ নেই আজও। এরপর থেকে কিংবদন্তির নামের সঙ্গে যে অভিধাটি যুক্ত হয় তা হচ্ছে, হ্যান্ড অব গড!
৩৪ বছর আগে মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়াম ছিল সেই গোলের সাক্ষ্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচটির প্রথমার্ধ ছিল গোল শূন্য। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে আর্জেন্টিনা। মাত্র ৬ মিনিটের মাথাতেই হয় গোল। বক্স থেকে বল পাওয়ার পর মারাদোনা বাঁ পায়ে সেটিকে পাস করে দেন টিমমেট জোর্গে ভালদানোকে। ভালদানো ইংলিশ ডিফেন্ডারদের কাটানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তিনি সুবিধে করে উঠতে পারেননি। ইংলিশ ডিফেন্ডার স্টিভ হজ বলটি ক্লিয়ার করেন। বলটি এরপর যখন পেনাল্টি বক্সের মধ্যে উড়ে আসে, তখন ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিল্টন ডান হাত তুলে লাফিয়ে বলটি ফিস্ট করতে যান। মারাদোনাও অন্য দিকে বল তাড়া করে ছুটতে ছুটতে লাফান হেড করার জন্য। সে সময় তাঁর বাঁ হাতটি মাথার খুব কাছেই ছিল। মারাদোনা গোল করার সময় আগে তাঁর বাঁ হাতটি বলে লাগে। তারপর বল মাথা ছুঁয়ে গোলে ঢুকেছিল। কিন্তু ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে যে তা তিউনিশিয়ান রেফারি আলি বেন্নাসিউরের নজর এড়িয়ে যায়। মারাদোনাও এক বার রেফারি এবং লাইন্সম্যানের দিকে তাকিয়ে পুরোদস্তুর উল্লাস শুরু করেন।
এর কিছু পরেই আসে চোখ ধাঁধাঁনো সেই গোল। যাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা গোল হিসাবে ধরা হয়। যেখানে সতীর্থ হেক্টর এনরিকের থেকে বল পেয়ে আউটফিল্ডে ইংল্যান্ডের ৪ জন ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করেন মারাদোনা। আর্জেন্তিনা ম্যাচটি ২-১ জিতেছিল। এই বিশ্বকাপেই ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।
কিন্তু সব ছাপিয়ে আলোচনা শুরু হয় প্রথম গোলটি নিয়ে। ম্যাচের পর গোলটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ম্যারাডোনা বলেন, ‘গোলটা এসেছিল আমার হেড এবং ঈশ্বরের হাত থেকে।’’
২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের একটি পত্রিকা যেমন মারাদোনাকে এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যদি ফিরে গিয়ে ইতিহাস বদলাতে পারি, তা হলে সেটা করব।’’ তারপরই অবশ্য যোগ করেন, ‘‘কিন্তু একটা গোল সবসময়ই গোল। সে বার আর্জেন্টিনা বিশ্বজয়ী হয়েছিল। আমি সেরা প্লেয়ার হয়েছিলাম। সেই ইতিহাস তো বদলানো যাবে না। তাই আমিও জীবনে এগিয়ে যেতে চাই।’’