শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
করোনায় ট্রাম্প এবং মার্কিন নির্বাচন প্রসঙ্গ

করোনায় ট্রাম্প এবং মার্কিন নির্বাচন প্রসঙ্গ

অ্যান্ড্রু গথর্প:

স্মরণকালের মধ্যে এ বছরটি অদ্ভুত ও অনিশ্চিত নির্বাচনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ বছর প্রেসিডেন্ট অভিশংসনপ্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন; প্রাণসংহারী একটি রোগ দেশকে গ্রাস করেছে, যা অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের একটি আসন ফাঁকা হয়েছে এবং তা নির্বাচনের ঠিক দিন কয়েক আগে পূর্ণ হবে। সর্বোপরি আছেন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ঐতিহ্যগত ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ বিশাল কিছু হতে যাচ্ছে; তবে এত কিছুর মধ্যে সেটি নজরে পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।

বছরটি ২০২০ সাল হওয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কিছু দিতে ব্যর্থ হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। এটিকে ঠিক সারপ্রাইজ বলা যায় কি না সংশয় আছে; সেটি হয়তো পরাকাষ্ঠায় উত্তীর্ণ হবে না। প্রেসিডেন্টের নজির আছে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে পূর্বসতর্কতার বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার। যা ঘটেছে তাতে মনে হয়, এটি হওয়ারই কথা ছিল। এটি ব্যাপক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে—শুধু দুজন প্রার্থী ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেই নয়, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে কী প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করছে প্রেসিডেন্টের অসুস্থতার মাত্রার ওপর এবং অন্য যে কারো সংক্রমিত হওয়ার ওপর। জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স দুজনই করোনা টেস্টে নেগেটিভ হয়েছেন। এর মানে এই নয় যে তাঁরা পার পেয়ে গেছেন। খবরাদিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প মৃদু লক্ষণে ভুগছেন। তিনি ভর্তি হয়েছেন ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিক্যাল সেন্টারে এবং চিকিৎসার জন্য এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ নিয়েছেন। সেখানে তিনি দ্রুত সুস্থও হতে পারেন অথবা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিপজ্জনক লক্ষণগুলো সাধারণত এক সপ্তাহ পরে দেখা যায়। আমরা এখনো জানি না ট্রাম্প কবে আক্রান্ত হয়েছেন।

ট্রাম্প যদি সত্যি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে দেশ অনিশ্চিত অবস্থায় নিমজ্জিত হতে পারে। ১৯১২ সালের পর কোনো প্রার্থী মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানের চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করবেন হয়তো। যত অসুস্থই হোন না কেন, ট্রাম্প ব্যালটে থেকে যাওয়ার চেষ্টাই করবেন।

ঘটনাটি মারাত্মক হোক বা না হোক, ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা কমাবেন বলে মনে হচ্ছে না। সম্ভবত তিনি সুস্থ অবস্থায় ফিরবেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা নজির হিসেবে হাজির করবেন। তিনি বলবেন যে ভাইরাসটি কখনোই তেমন খারাপ ছিল না। কিন্তু করোনাভাইরাস এমন কোনো প্রসঙ্গ নয়, যা মার্কিনরা শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে জানে। তবে প্রেসিডেন্টের যে অভিজ্ঞতাই হোক বা তিনি যা-ই বলুন, মৃত আত্মীয়-স্বজন আর ফিরে আসবে না বা কেউ হারানো চাকরি ফিরে পাবে না।

ট্রাম্প যদি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন, আমরা আশা করতে পারি, নির্বাচন বিলম্বিত করার বা বাতিল করার পক্ষে কথা উঠবে। বিলম্বিত করার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে এবং এটি কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। যেটি ভাবা যেতে পারে সেটি হলো, ট্রাম্পের অসুস্থতাকে একটি বিবৃতি তৈরির কাজে লাগানো যায়। আর সেটি হচ্ছে—অবৈধভাবে তাঁর কাছ থেকে নির্বাচনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণপন্থী মিডিয়ার বেশির ভাগ এরই মধ্যে মেইল-ইন-ব্যালট সম্পর্কে একটি ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ দাঁড় করিয়েছে। দেশের বৃহৎ একটি অংশ ট্রাম্প হেরে গেলে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট যদি সাময়িক সময়ের জন্য প্রচারাভিযান চালাতে না পারেন, তাহলে তাঁর জন্য আরেকটি অজুহাত তৈরি হবে—সমর্থকদের তিনি বলবেন ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে।

দেশের সামনে যে ঝুঁকি সেটি শুধু নির্বাচনী নয়। প্রেসিডেন্সি একটি দপ্তর, এর গুরুদায়িত্ব এবং প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। ট্রাম্প কখনো এর গুরুত্ব বোঝেননি। সরকারের বেশির ভাগ অটোপাইলটে চলছে। প্রেসিডেনশিয়াল গাইডেন্সের অভাব রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প ইচ্ছা করলে বিপজ্জনক আদেশ দিতে পারেন না। পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কমান্ড তাঁর হাতে, এগুলো বিদেশের দিকে তাক করা। নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রও তাঁর আছে, সেটি তিনি স্বদেশে কাজে লাগাতে চান।

করোনাভাইরাসের রোগীরা লাগাতার বোধশক্তিহীনতার কথা বলে। কনফিউশন ও জটিলতা রুটিন কাজে সমস্যা তৈরি করে। যেকোনো প্রেসিডেন্ট স্বীকার করতে দ্বিধা করবেন—এই নির্বাচনের সময় তাঁরা নিজ কাজের জন্য উপযুক্ত নন। ট্রাম্প এতটাই আত্মমগ্ন যে এ কথা তাঁর মুখ দিয়ে বেরই হবে না। এর মানে, সব ক্ষমতাই তাঁর হাতে থাকবে, তবে সেটি আরো অস্থিতিশীল হতে পারে। ২০২০ সম্পর্কে অবহিত থাকলে বলা যায়, প্রকৃত ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ আসতে এখনো বাকি। আমরা এখনো জানি না, প্রেসিডেন্ট ঠিকমতো সাড়া দিতে পারবেন কি পারবেন না। তাঁর আত্মমগ্নতার কথা আমরা জানি, বিজ্ঞানের প্রতি অবজ্ঞার কথা জানি, মিথ্যা বলার প্রবণতার কথা জানি। কাজেই ঠিক কেমন সাড়া তিনি দেবেন, তা সময়মতো আমরা সম্ভবত জানতে পারব না।

অবজ্ঞা ও উদাসীনতা ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে দেশকে এ পরিস্থিতিতে দাঁড় করাতে। তিনি নিজেরও অপরিমেয় ক্ষতি করেছেন। ট্রাম্প যুগের সর্বশেষ শিকার ট্রাম্প নিজেই।

লেখক : লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান (ইউকে)

ভাষান্তর : সাইফুর রহমান তারিক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877