স্বদেশ ডেক্স: ১৯৯৯ বিশ্বকাপের প্রতিচ্ছবিই যেন ২০১৯ বিশ্বকাপ। সেবার আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড; এবারও তারাই। আয়োজক হয়েও সেবার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ক্রিকেটের কুলীন সদস্য দেশটি। ২০ বছর পর আয়োজক হয়ে আবারও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কায় ইংলিশরা! আজ রোববার ভারতের কাছে হারলে সেই শঙ্কা আরও প্রবল হবে।
বার্মিংহামে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় ম্যাচটি।টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান।
বার্মিংহাম স্টেডিয়াম আবারও ফ্ল্যাশ ব্যাক থেকে ’৯৯ বিশ্বকাপ সামনে নিয়ে আসছে। এই বার্মিংহামে ২০ বছর আগে ভারতের কাছে হেরেছিল ইংলিশরা। শচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়, আজহারউদ্দিন, জাদেজাদের করা ২৩২ রান টপকাতে পারেনি স্বাগতিক ইংল্যান্ড। শ্রীনাথ, প্রসাদ, গাঙ্গুলী, কুম্বলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৬৯ রানে গুটিয়ে যান নাসের হোসেন, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফরা।
ভারত ম্যাচ জিতে নেয় ৬৩ রানে। অতীত আজ নিশ্চয়ই বাড়তি প্রেরণা জোগাবে কোহলি, ধোনিদের। পূর্বসূরিদের লজ্জার হারের প্রতিশোধের দারুণ সুযোগ মরগ্যান, স্টোকস, মার্ক উডদের। সেই সঙ্গে ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনাল রেসে টিকে থাকার লড়াইও। ৬ ম্যাচ খেলে অপরাজিত থাকার পরও সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি ভারতের। ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান কোহলির দলের। আজ জিতলে ৭ ম্যাচ ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শেষচারে জায়গা করে নেবে ১৯৮৩ ও ২০১১ বিশ্বকাপজয়ীরা। হেরে গেলেও আশঙ্কার কিছু নেই। আরও দুই ম্যাচ হাতে থাকবে। যেখানে ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জিতলে কিংবা বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হলে (পয়েন্ট ভাগ হলে) সেমির টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে। অনেকটা নির্ভার হয়েই ইংলিশদের আজ মোকাবিলা করবে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়েও স্বস্তিতে নেই স্বাগতিকরা। কারণ শেষ দুই ম্যাচে শ্রীলংকা এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারায় কোণঠাসা মরগ্যানের দল। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে যদিও টেবিলের চার নম্বরে অবস্থান। তার পরও কঠিন সমীকরণের বেড়াজালে আবদ্ধ দলটি। তাদের ঘাড়ে যে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হার মানেই শেষ তিন দলের সেমির পথ মসৃণ! বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে হারলে হাতে কেবল একটি ম্যাচ থাকবে ইংলিশদের।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি তখন জিততে হবে এবং পয়েন্ট টেবিলের অন্য দলগুলোর দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে ভারতকে হারালে সেমির সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে।
বিশ্বকাপের অতীত পরিসংখ্যান কিন্তু দুদলের পক্ষে কথা বলছে। ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। বিশ্বকাপে আগের সাত দেখায় তিন জয় ভারতের; ইংল্যান্ডেরও সমান। ২০১১ বিশ্বকাপের ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের সঙ্গে টাই করে ভারত। বিশ্বকাপে সমান সমান হলেও মোট ওয়ানডের পরিসংখ্যানে পাল্লা ভারী ভারতেরই। দুদলের ৯৯ দেখায় ভারতের জয় ৫৩টি, ইংল্যান্ডের ৪১ ম্যাচে। এ ছাড়া দুটি টাই ও তিন ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
বিশ্বকাপে ভারত-ইংল্যান্ডের শুরু প্রথম বিশ্বকাপেই লর্ডসে ১৯৭৫ সালে। সেবার ভারতীয়দের ২০২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের শক্তির জানান দেয় ইংলিশরা। প্রতিশোধ নিতে সময় লাগেনি। তৃতীয় বিশ্বকাপে ১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতেই (ম্যানচেস্টারে) ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারায় ওই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত। এর পর ১৯৮৭ ও ১৯৯২ বিশ্বকাপে টানা জেতে ইংল্যান্ড।
১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে জিতে মধুর প্রতিশোধ নেয় ভারত। বিশ্বকাপে আজ অষ্টমবার মুখোমুখি হবে দুদল। যেখানে ভারতের সেমিতে যাওয়ার ম্যাচে টিকে থাকার হিসাব ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন কোহলি, পান্ডিয়া, বুমরাহ, মোহাম্মদ শামিরা। বিশেষ করে ভারত অধিনায়কের ব্যাটিংয়ে উড়ছে দলটি। তবে চিন্তারও শেষ নেই। রোহিত, রাহুল, বিজয়, ধোনিরা সেভাবে এখনো জ্বলে উঠতে পারেননি। যে ম্যাচে কম স্কোর হচ্ছে ভারতের, সেই ম্যাচে বোলাররা পুষিয়ে দিচ্ছেন। মূলত এভাবেই এগিয়ে চলছে দলটি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগই দারুণ।
শেষ দুই ম্যাচে (শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়া) সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি মরগ্যান, বেয়ারস্টো, ভিন্সরা। তার ওপর জেসন রয়ের ইনজুরি অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে ইংলিশদের ব্যাটিং। যেমনটা শিখর ধাওয়ানের ইনজুরিতে হয়েছে ভারতের। টিকে থাকার ম্যাচে নিজেদের কতটা মেলে ধরে ইংল্যান্ড সেদিকেই চোখ সবার। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সমর্থকদের। কারণ ইংল্যান্ডের হারই যে শেষ চারের সোপান দুই দলের!