বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আবার ঘরে ঘরে সর্দিজ্বর

আবার ঘরে ঘরে সর্দিজ্বর

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সামান্য জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি হলেই উৎকণ্ঠিত মানুষ ছুটছিলেন চিকিৎসার জন্য। তখন পরীক্ষা করে অনেকের শরীরেই করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব না মেলায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক একটু কমেছিল। যদিও তখনো ব্যাপক হারে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় সাবধানতা ছিল সবার মধ্যে। ফলে মাঝের সময়টাতে সাধারণ ফ্লু বা জ্বর সর্দি-কাশির প্রকোপ যেন একটু কমে আসে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানুুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে গাছাড়া মনোভাব। কিন্তু এখন ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও ঘরে ঘরে বেড়েছে সর্দিজ্বর শ্বাসতন্ত্রের রোগী। শিশু, নারী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষই এখন সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে এ নিয়ে আবারও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে করোনার সংক্রমণও।

জানা গেছে, এখন প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন। সর্দিজ্বরের রোগীর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণও একটু বেশি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তের আগেও সর্দিজ্বর নিয়ে মানুষকে এত বেশি আতঙ্কিত হতে দেখা যায়নি। সাধারণভাবেই শীতের সময় মানুষ সর্দি, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, টনসিল, বাতব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকের। আবার ঋতু পরিবর্তনের সময়ও এ ধরনের রোগব্যাধীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে গ্রীষ্মকালে এ ধরনের রোগী বেশি হয় না। কিন্তু এখন অনেক মানুষ সর্দিজ্বরসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভ্যাপসা গরম, রোদ বৃষ্টির কারণে কিছুদিন ধরে সর্দি, জ্বর, হাঁচি, কাশি ও শ্বাসতন্ত্রের রোগী বেড়েছে। বর্তমানে হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে এই ধরনের রোগী বেশি আসছে। এ ধরনের রোগের সঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রমণও

একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে গাছাড়া মনোভাবের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই এ সময় মানুষকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল বাসার সিকদার জানান, তাদের আউটডোরে প্রতিদিন দেড় হাজারের মতো রোগী আসে। এর মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ হচ্ছে মেডিসিনের রোগী। বর্তমানে এ রোগীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সর্দি, জ্বর ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে এ সময় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও এখন লাখ-লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে ফোন করে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৪ জন। একই সময় দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বারসহ গ্রামীণ পর্যায়ে থাকা ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে হাজার-হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। সর্দি, জ্বর, হাঁচি-কাশি ও গলাব্যথায় আক্রান্তদের অনেকে করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। তারা ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন। অনেকে আবার স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন এবং দেশজ চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আল আমিন খান জানান, তার ঘরে এ মুহূর্তে ৩ জন সর্দিজ্বরে আক্রান্ত। কিছুদিন আগে প্রথমে তার মায়ের জ্বর আসে। ইতোমধ্যে জ্বরের ওষুধ খেয়ে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দুদিন পর তার স্ত্রী ও ছেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া তার পরিচিত অনেকেই এখন সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কর্মরত কর্মচারী জাকির হোসেন জানান, তার ঘরেও বর্তমানে ২ জন সর্দিজ্বরে আক্রান্ত। প্রথমে তিনি আক্রান্ত হন। এ খবর অফিসে জানালে তাৎক্ষণিক অফিস থেকে বলা হয় বাসায় থাকতে। ৩ দিন পরই তার সর্দিজ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু করোনার ভয়ে এখন অফিসে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, দেশে করোনা শনাক্তের আগেও সর্দিজ্বর নিয়ে কোনো আতঙ্ক ছিল না। কিন্তু এখন সর্দিজ্বর হলেই করোনা হয়েছে এ ধারণায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

কিন্তু কোনটা করোনা আর কোনটা সাধারণ সর্দিজ্বর কীভাবে বোঝা যাবে তা নিয়ে চিকিৎসকরা আগেই আলোচনা করেছেন। তারা বলছেন, করোনা হলে জ্বর, শুকনো কাশি, গলাব্যথা, চোখে ব্যথা, মাংশপেশিতে ব্যথা, স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্টসহ বেশ কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে দেখা দিতে পারে র‌্যাশ। ফলে এসব লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে মেনে চলতে হবে আইসোলেশন পন্থা ও বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি। আবার কেউ যদি সাধারণ ফ্লুতেও আক্রান্ত হন, তা হলেও তিনি এসব পন্থা মেনে চলতে পারেন। তবে সাবধানতা হিসেবে ফোনে নিতে পারেন টেলিমেডিসিন সেবা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877