স্বদেশ ডেস্ক;
সপ্তম দফার আলোচনার শেষেও ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্যিক কাঠামোর প্রশ্নে অগ্রগতি হয়নি৷ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটেনের একগুঁয়ে ও অবাস্তব মনোভাবকে দায়ী করেছেন৷
আগামী ৩১ ডিসেম্বর ব্রিটেন পাকাপাকিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে৷ চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সবকিছু আগের মতোই চলছে৷ সেই অবস্থার মেয়াদ শেষ হবার আগেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্থির করতে বাণিজ্যসহ একাধিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় প্রায় কোনো সাফল্য আসেনি৷ সেপ্টেম্বর মাসে শেষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হবে– এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না৷ এই অচলাবস্থার জন্য ফ্রান্স এবার সরাসরি ব্রিটেনের সরকারকে দায়ী করেছে৷ আগামী সোমবার লন্ডনে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে৷
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনিভ ল্য দ্রিয়ঁ সোমবার প্যারিসে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে বলেন, ব্রিটেনের একগুঁয়ে ও অবাস্তব মনোভাবের কারণে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না৷ তার মতে, ব্রেক্সিটের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিরকাল ঐক্য দেখিয়ে এসেছে৷ যারা ইউরোপের সার্বিক ভাঙনের চিহ্ন দেখিয়ে এসেছে, তাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে৷ ঐক্যবদ্ধ থেকেই বিশ্বমঞ্চে নিজস্ব অবস্থান মজবুত করা সম্ভব বলে মনে করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়েও গত শুক্রবার ব্রিটেনের সাথে আলোচনার বিষয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ এ দিন ব্রাসেলসে ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য সংক্রান্ত সপ্তম দফার আলোচনা শেষ হয়৷ তার মতে, অগ্রগতির বদলে বরং অবনতি দেখা যাচ্ছে৷
উল্লেখ্য, আপাতত ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রীয় ভরতুকি বা সহায়তা এবং মাছ ধরার অধিকারকে কেন্দ্র করেই সবচেয়ে বেশি সংঘাত দেখা যাচ্ছে৷ ইইউ সব ক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা ন্যায্য কাঠামোর উপর জোর দিলেও ব্রিটেন নিজস্ব নীতির ক্ষেত্রে বাইরে থেকে এমন চাপ মানতে প্রস্তুত নয়৷
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের নিবিড় সহযোগিতার উল্লেখ করেন৷ তার মতে, ব্রাসেলসে ইইউ সদর দফতরে এ ক্ষেত্রে সমন্বয় সম্ভব না হলে সেই সম্মিলিত শক্তি কমে যাবে৷ সে ক্ষেত্রে ইটালি, স্পেন ও পোল্যান্ডের মতো দেশ ইইউর পররাষ্ট্রনীতি স্থির করতে আরো বেশি দায়িত্ব নেবে৷
সেপ্টেম্বর মাসে ব্রেক্সিট পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক কাঠামো সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না ঘটলে ঠিক সময়ে সেই ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব হবে না বলে বার বার সতর্কতাবাণী শোনা যাচ্ছে৷ কারণ সে ক্ষেত্রে নভেম্বরের আগেই সব খুঁটিনাটি বিষয়ের নিষ্পত্তি করতে হবে৷ তারপর সংসদীয় অনুমোদনসহ নানা আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবার কথা৷
ব্রেক্সিট পরবর্তী সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা ব্যর্থ হলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ন্যূনতম মানদণ্ড অনুযায়ী ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য চালাতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে দুই দেশের কোম্পানিগুলিকে শুল্কসহ একাধিক বাধার মুখে পড়তে হবে৷ এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে