বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

ভোগান্তির পাহাড় মাড়িয়ে হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স

ভোগান্তির পাহাড় মাড়িয়ে হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স

স্বদেশ ডেস্ক;

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে ঠেকেছে। শিক্ষানবিশ আবেদন তথা লারনার কার্ড সংগ্রহ থেকে শুরু করে পরীক্ষা গ্রহণ, আঙুলের ছাপসহ ছবি তোলার প্রক্রিয়া এবং সবশেষে কার্ড সরবরাহ পর্যন্ত দুই বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ঝুলে আছে ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ আবেদন। করোনার কারণে সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পরীক্ষা ও বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) গ্রহণ। গত ২৩ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হলেও ভোগান্তি বেড়ে গেছে। এর বাইরে অনলাইনে লারনারের আবেদন করতেও ভোগান্তিতে পড়ছে। দিনভর নেটওয়ার্ক সমস্যা। সর্বোপরি কার্ড মুদ্রণের জটিলতার অবসান হয়নি এখনো।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কার্ড মুদ্রণ করবে এ নিয়ে রয়েছে টানাপড়েন। দরপত্র বাতিল ও পুনরায় কার্যাদেশ প্রদান এবং রিভিউ আপিলের পালা চলছে। সর্বশেষ খবর- নতুন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিআরটিএ। তবে এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ করেছে দরপত্রে অংশ নেওয়া অপর প্রতিষ্ঠান। এসবের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ এখন লাইসেন্সের কার্ড হাতে পাচ্ছেন না। ডেলিভারির সময় বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলে নতুন তারিখ দেওয়া হয় দেড় বছর ধরে। সম্প্রতি নতুন করে আরও এক বছরের তারিখ দিয়ে গ্রাহকদের বিদায় করা হচ্ছে।

বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, লাইসেন্সের কার্ড মুদ্রণ এখন সোনার হরিণ। দুবারেরও বেশি সময় ডেলিভারির তারিখ পরিবর্তন করেও কার্ড পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কেবল মিরপুর অফিসেই লাইসেন্সের জন্য ৬৫ হাজার কার্ড ঝুলে আছে। আরও ১৬ হাজার আছে ছবি তোলার প্রক্রিয়াধীন। করোনার আগে দিনে গড়ে সাড়ে চারশ জনের পরীক্ষা নেওয়া হতো; এখন নেওয়া হয় দেড়শ। স্বাস্থ্যবিধি মানার স্বার্থে সংখ্যা কমাতে হয়েছে। একান্ত জরুরি প্রয়োজনে কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়াটিও জটিল হয়ে গেছে। কারণ বর্তমানে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্ড পর্যাপ্ত নেই। নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় নতুন করে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিআরটিএ। গত ২৯ জুলাই চুক্তিস্বাক্ষর হলেও প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে। এর মধ্যে বাধা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে দরপত্রে অংশ নেওয়া অপর প্রতিষ্ঠান। তাদের অভিযোগ-নালিশ নিষ্পত্তি না হলে বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারে। এরই মধ্যে রিভিউ মিটিং হয়েছে। তার আগে গত ১৩ জুলাই নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ নামের প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপরীতে অভিযোগ করে যাচ্ছে সেলপ নামে অন্য প্রতিষ্ঠান।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি হচ্ছে। এখন নতুন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আশা করি, তিন মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।

ঢাকাসহ সারাদেশে ৫৭টি সার্কেল অফিস রয়েছে। সর্বত্র মানুষের ভিড় ও ভোগান্তি কেবল লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য। চাকরির নিয়োগপত্র কিংবা বিদেশযাত্রী হলে ভিসা-পাসপোর্ট যাচাই করে সীমিত আকারে লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি সাধারণ কার্ড বিতরণ শুরু করেছে বিআরটিএ।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের কারণে ২০১৮ সালে হঠাৎ করে লাইসেন্সের আবেদনকারী বেড়ে যায়। তা ছাড়া বর্তমানে নতুন আইন অনুযায়ী লাইসেন্স না থাকার অপরাধে প্রথমবার ৫ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। তাই লাইসেন্সপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড মুদ্রণে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে বিআরটিএ। তার আগে ২০১৯ সালের ১০ জুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে ৩৫ লাখ কার্ড মুদ্রণের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে দরপত্র বাতিল হয়। এ জন্য সাত মাস দেরি হয়। এতে করেও কার্ডের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার দরপত্র আহ্বান করলে তা সংশোধনের নোটিশ ২০ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন পায়। এর পর দরপত্রে মূল্যায়ন কমিটিতে পরিবর্তন আসে ২ মার্চ। দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরের পার্থক্য বিবেচনায় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স ৩৬.২৪ শতাংশ কম প্রস্তাব করে। তাদের মূল্যায়িত দরের একক ৩০০.৬৬ টাকা। আর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা সেলপ স্মার্ট কার্ডস অ্যান্ড সলিউশনসের মূল্যায়িত দরের একক ৩৩১.১৬ টাকা। ২৯.৭৭ শতাংশ কম তাদের দরপ্রস্তাব। তাই গত ১ জুলাই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি) মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।

এর আগে ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। তাদের সময়সীমা ২০২২ সাল। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় চাহিদার কারণে। বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত হওয়ায় টাইগার আইটির মাধ্যমে অতিরিক্ত কার্ড ছাপানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল গত বছর (২০১৯ সাল)। তখন কালোতালিকাভুক্তির কারণে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কার্যাদেশের প্রস্তাব নাকচ করে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য গত বছরের ১০ জুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিন প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দেয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- ১. আইবিসিএস ও এসইএলপি, ২. লজিক ফোরাম ও এমএসপি এবং ৩. পিএনএমবি ও বাবর। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন যোগ্য বিবেচিত হয় আইবিসিএস ও এসইএলপি নামের প্রতিষ্ঠানটি। দরপত্র মূল্যায়নকালেই এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় আরেক প্রতিষ্ঠান এমএসপি। এ নিয়ে অভিযোগ যাচাই শেষে সেলপ (এসইএলপি) নামের প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা সেলপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পর মতামত জানতে বিআরটিএকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। এর জবাবের পর ওই সেলপকেই মনোনীত করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেটি তখন নাকচ করে মন্ত্রিসভা কমিটি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877