মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ

আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ

আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। বিগত এপ্রিল মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম এসেছে প্রবাসী আয়। আরো কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে এ আয় । এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহী করার জন্য প্রণোদনার নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কেউ ৫ লাখ টাকা দেশে পাঠালে নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য ব্যাংকে কোনো কাগজপত্র দাখিল করতে হবে না। আগে যেখানে ছিল দেড় লাখ টাকা। আর ৫ লাখ টাকার ওপরে হলে ব্যাংক কাগজপত্র দাখিলের জন্য দুই মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আগে যেখানে দেড় লাখ টাকার ওপরে হলে ১৫ দিন সময় দেয়া হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রভাবে রেমিট্যান্সপ্রবাহেও বড় ধরনের ভাটা পড়ে গেছে। শ্রমিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বলা চলে গত মাস দেড়েক যাবৎ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে রেমিট্যান্স আসা। সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরো ভয়াবহ আকারে কমে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ফেব্রুয়ারির আগে প্রায় প্রতি মাসেই গড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে রেমিট্যান্স আসত। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের ওপরে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর প্রবাহ আরো বেড়ে যায়। সেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ গত ফেব্রুয়ারির হিসাবে কমে ১০ শতাংশে নেমে গেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহের অবস্থাও খারাপ ছিল। কিন্তু গত এপ্রিলে অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো রেমিট্যান্সের হিসাব চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, এপ্রিলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ৪০ শতাংশ কমে গেছে আগের বছরের তুলনায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আসে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে অবস্থান করছেন। এদের বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। আর ইতালিতে বৈধ-অবৈধভাবে থাকেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। কিন্তু করোনার প্রভাবে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না।
সৌদি আরব থেকে মো: আমির হোসেন নামে এক প্রবাসী জানান, তারা মূলত গত দেড় মাস যাবৎ অবরুদ্ধ । ঘর হতে বের হতে পারছেন না। কোম্পানির পক্ষ থেকে চাল, ডালসহ কিছু তরিতরকারি দিয়ে গেছে। এগুলো খেয়েই তারা ঘরের মধ্যে দিন যাপন করছেন। কাজ নেই। বসে বসে খাচ্ছেন। দেশ থেকে ঋণ করে সৌদি আরব এসেছেন। এভাবে কাজহীন বসে থাকলে ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

আমির হোসেনের মতো আরো অনেকেই আছেন যারা বেকার ঘরে বসে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশীরা আছেন যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। তারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন তারা পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এখন পুলিশের ভয়ে তারা চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারছেন না বলে ইতালি থেকে শাহজাহান নামে এক ছোট ব্যবসায়ী জানান। তিনি বিভিন্ন দোকানে ফুল সরবরাহ করে থাকেন।

ব্যাংকাররা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একমাত্র সচল রাস্তা ছিল রেমিট্যান্সপ্রবাহ। কিন্তু রেমিট্যান্সপ্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতেও বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোকে আমদানির দায় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এখনো যেসব বাংলাদেশী দেশের বাইরে কর্মরত আছেন তারা যাতে সহজেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ পায় সে জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত বৈধ পথে রেমিট্যান্সকে উৎসাহিত করতেই নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা সার্কুলারে আরো বলা হয়, ৫ লাখ টাকার ওপরে কেউ রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনার অর্থ পেতে ব্যাংকে কাগজপত্র দাখিলের সময় দেয়া হয়েছে দুই মাস। আর এ সুযোগ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করে, এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের ধস অনেকাংশেই কেটে যাবে। যারা এখনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান তারা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877