রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

পা কেটে জয় বাংলা শ্লোগান : প্রধান আসামি চেয়ারম্যান

পা কেটে জয় বাংলা শ্লোগান : প্রধান আসামি চেয়ারম্যান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের থানাকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় (পা বিচ্ছিন্ন) নিহত মোবারক মিয়া (৪৫) খুনের ঘটনায় অবশেষে ছয় দিন পর ১৫২ জনকে আসামি করে নিহতের চাচাত ভাই চাঁন মিয়া নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় পার্শ্ববর্তী বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে ‘প্রধান আসামি করে একটি গ্রুপের দলনতো কাউছার মোল্লাকে ২ নম্বর ও প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু কাউছারকেও এ মামলায় ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনাম আরো ১৫০ জনকে মামলায় আসামি দেখানো হয়।

জানা যায়, থানাকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় (পা বিচ্ছিন্ন) নিহত মোবারক মিয়ার খুনের ঘটনায় ৬ দিন পর ১৫২ জনকে আসামি করে শুক্রবার রাতে নিহতের চাচাত ভাই চাঁন মিয়া নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দায়ের হওয়া বহুল আলোচিত এ মামলায় অন্য একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ‘প্রধান আসামি’ করায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোলচার ঝড় ওঠেছে। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করায় মামলার ভবিষ্যত ও সংঘর্ষের আগুন বীরগাঁও ইউনিয়নে ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে প্রধান আসামি বীরগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ মুঠো ফোনে বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। থানাকান্দি গ্রামের সংঘর্ষের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। সংঘর্ষের দিন আমি আমার এলাকায় ত্রাণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই বর্তমান এমপি এবাদুল করিম বুলবুল আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করে আসছেন। আমাকে হয়রানি করতেই এমপি সাহেব সরাসরি হস্তক্ষেপ করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে সংঘটিত একটি খুনের ঘটনায় সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র করে বাদীকে বাধ্য করে আমাকে প্রধান আসামি করানো হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বাদল ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করি বিধায় এবং বাইশমোজার বাজার এককভাবে তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য এবং আমি ওনার কাছে না যাওয়ার কারণে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আর এসব ষড়যন্ত্রের মূলে আছে গত ইউপি নির্বাচনে আমার সাথে পরাজিত হওয়া এমপির ঘনিষ্ঠজন জহির রায়হান। আমাকে আসামি করার পরপরই বাজারে এসে জহির মিটিং করেছে, কি ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায়।ওই মিটিং এ নবীনগর থানার ওসিও উপস্থিত ছিলেন, পরে তিনি চলে যান।

তিনি আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন জনগণের পাশে থাকার জন্য এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করার জন্য। নেত্রীর নির্দেশ মোতাবেক আমি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এই খুনের সাথে কোনোভাবেই আমি জড়িত নই। এ কারণে গ্রেফতারের আতঙ্ক নেই আমার মধ্যে। আমি আমার এলাকায় আছি, আইনকে আমি শ্রদ্ধা করি, আমি আইনের উর্ধ্বে না। পুলিশ যদি মিথ্যা শক্তির দ্বারা সাজানো মামলায় আমাকে গ্রেফতার করে আমার কিছু করাব থাকবে না। তবে এটা হবে এলাকার জনগণের দুর্ভাগ্য। এই বিপদের সময় তারা আমাকে পাশে পাবে না।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল মুঠোফোনে বলেন, সে যদি অভিযোগ করে আমার কী করার আছে, সে তো ফেসবুকে সমানে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। সে যদি নির্দোষ হয় নিশ্চয় এটা তদন্ত হবে। বাদি তাকে আসামি করেছে, ঠিক আছে। আসামি করলেই তো সব আসামির ফাঁসি হয়ে যায় না। বিচার প্রক্রিয়া তো একটা নিয়ম কানুন আছে। সে নিয়ম অনুযায়ী চলবে, তার তো অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আর এমপি কী মামলা করে নাকি। পাগলামি করার কোনো সুযোগ নেই, সে বলতেছে আমি শুনতেছি। মানুষ মরতেছে এই দূর্বিসহ অবস্থার মধ্যে একটা মানুষের পা কেটে মিছিল করে উল্লাস করার এ সাহস পায় কী করে পায় মানুষ কোথায় পায় এ শক্তি। বাদি জানে ভালো, আমি তো আর ঘটনাস্থলে যানি। বাদির সাথে আমার কথাও হয় নাই। এটা বাদি ভালো জানে কিভাবে তাকে আসামি দিলো। আমি পুলিশকে সাফ বলে দিয়েছি, এ মামলায় যেন কোনো নির্দোষ লোক অযথা হয়রানির শিকার না হয়।

জহির রায়হান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান কবিরের সাথে দাঙ্গাবাজদের মিটিংয়ের অসংখ্য ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবি প্রমাণ করে এই সংঘর্ষের ও খুনের সাথে কবির চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত। বাজার আমার বাড়ির সাথে, আমি কেন বাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে যাবো। এলাকায় আজ ১৭ দিন পর গিয়েছিলাম, তখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে এলাকায় ত্রান বিতরনের বিষয়ে কথা বলেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন বলেন, ১৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও তদন্তে এজাহারভুক্ত কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে, কাউকেই ন্যূনতম হয়রানি করা হবে না। তিনি আরো জানান, এর মধ্যে ২ নম্বর আসামিসহ এ মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, অভিযোগ রয়েছে যে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও এলাকার সর্দার কাউছার মোল্লার পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ১২ এপ্রিল থানাকান্দি গ্রামের সংঘর্ষে মোবারকের বাম পা কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে কাউসার মোল্লার লোকজন। এরপর কাটা পা হাতে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে গ্রামে আনন্দ মিছিল করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ দিন পর ১৫ এপ্রিল মারা যান মোবারক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877