শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

করোনা নিয়ে কুষ্টিয়ার ডিসি পরিচয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে আটক তরুণী

করোনা নিয়ে কুষ্টিয়ার ডিসি পরিচয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে আটক তরুণী

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে করোনাভাইরাস নিয়ে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কপি করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন ২২ বছরের এক তরুণী মীর মনিরা। জেলা প্রশাসকের পরিচয় ব্যবহার করে তৈরি করেন বিভিন্ন ডকুমেন্ট। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তা প্রচার করেন। মনিরা ও তার সাত বন্ধু মিলে এমন পরিকল্পনা করে একটি ম্যাসেঞ্জারে ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করতে থাকেন। ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচয় দেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের বাসভবনে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেন মীর মনিরা। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এনডিসি) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম কুষ্টিয়া মডেল থানায় ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩(২) ও ২৪(২) ধারা আইনে মামলা করেছেন। রাতেই তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মনিরা কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার মীর মিজানুর ইসলামের মেয়ে এবং ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে অবগত করেন মনিরা নামে একজন ব্যক্তি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করেছেন এবং এসব ডকুমেন্ট বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রচার করছে। বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার বিএমডিসির সভাপতি প্রফেসর মো: শহিদুল্লার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন বলে জানান। তাৎক্ষণিক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বিএমডিসির সভাপতির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন।

এ সময় প্রফেসর শহিদুল্লাহ জানান, উক্ত ম্যাসেজগুলো তার ভাগনে ইকবাল হোসেন শামীম’র কাছ থেকে পেয়েছেন। মনিরা তার কাছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক হিসেবে একটি প্রেস রিলিস পাঠান এবং ডিসি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কথাবার্তা বলেন। এসব বিষয় বিএমডিসির সভাপতি প্রফেসর শহিদুল্লাহ জানার সাথে সাথে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করে তার ভাগনে ও মনিরার আপন খালু ইকবাল হোসেন শামীমের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোবাইলে ইকবাল হোসেনের কাছে মীর মানিরা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনিরা তো কুষ্টিয়ার ডিসি। বিস্তারিত জানতে তাকে বাসভবনে আসতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও কার্যালয় কোনোটিই চিনি না। পরে তাকে আনতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি গাড়ি পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে সেই গাড়িতে মীর মনিরাকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে আসেন ইকবাল হোসেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিরার কাছ থেকে সবকিছু জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সবকিছুই অস্বীকার করতে থাকেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট লুৎফুন্নাহার আলাদাভাবে মনিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট লুৎফুন্নাহার জানান, মীর মনিরা জানিয়েছে তারা সাত বন্ধু মিলে এই পরিকল্পনা করেন। কুষ্টিয়ার ডিসি পরিচয়ে মনিরা নিজের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করতে থাকেন।

মামলার বাদি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারি কমিশনার মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সময়ে করোনা বিষয়ে প্রতিদিন জেলা প্রশাসক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসনের ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কপিতে জেলা প্রশাসকের নাম ও স্বাক্ষর এডিট করে সেখানে মীর মনিরা নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে সেটা তার পরিচিতদের কাছে পাঠাতেন। এটা তিনি মজা করে করতেন বলে জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, আইসিটি আইনে মামলায় ওই তরুণীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877