রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন

নিউইয়র্ক নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের ভয়াবহ বর্ণনা

নিউইয়র্ক নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের ভয়াবহ বর্ণনা

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আধুনিক চিকিৎসার জন্য সুপরিচিত শহরগুলোকে একটা একটা করে বিধ্বস্ত করছে। হাঁটু গেঁড়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কও। বিশ্বের সবথেকে বেশি করোনা আক্রান্ত এখন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অর্ধেকের বেশি আবার এই নিউ ইয়র্ক শহরের। এখানে থাকা সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন চাপ আসছে। অন্য রোগিদের পাশে ফেলে নতুন করে করোনা রোগীদের জন্য জায়গা করার চেষ্টা চলছে। ওয়ার্ডগুলোর পুনর্বিন্যাস হচ্ছে। কিন্তু সংকট কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সব গ্রাস করে নিয়েছে।

একই অবস্থা নিউ ইয়র্কের বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও। এ নিয়ে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালগুলোর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কেনেথ রাসকি বলেন, সরকারি বলেন আর বেসরকারি বলেন, সব হাসপাতালই এখন সবাই এক নৌকায় আছে। সবাইকেই এই সংকটের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। করোনা মহামারি চোখ খুলে দিলো যে, এমন একটি সংকট মোকাবেলায় কতখানি অপ্রস্তুত ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজেস্টার প্রিপারেডনেসের পরিচালক আইরিন রেডলেনার আক্ষেপ করে বলেন, কোনো সরকারের সময়ই এমন মহামারি ঠেকাতে চিকিৎসাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়ার মতো অর্থ ছিল না। শহর কর্তৃপক্ষ ও প্রাদেশিক সরকার এখন উঠে পরে লেগেছে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে। যেসব স্থাপনা বহুদিন ব্যবহৃত হচ্ছে না সেসব স্থানে এমন হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। সোমবার জ্যাভিটস সেন্টার ম্যানহাটনে একটি ২৫০০ শয্যার হাসপাতাল খুলে দিয়েছে। সেখানে জরুরি সব ব্যবস্থাও রয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজে আরো ১০০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। একটি টেনিস স্টেডিয়ামকে খুলে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে ৩৫০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেখানে সব মিলিয়ে এখন রয়েছে ২০ হাজার শয্যা। এটিকে আগামি কয়েক সপ্তাহে অন্তত তিনগুন করতে না পারলে বিশাল সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরইমধ্যে নিউ ইয়র্কে ১৫০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে যা সামনে কয়েকগুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর বলছেন, ৫ এপ্রিল নাগাদ তাদের ভেন্টিলেটর ও মাস্ক শেষ হয়ে যাবে। তার ভাষায়, এই ভাইরাস আমাদের থেকে সবসময়ই একদিন এগিয়ে ছিল। নিউ ইয়র্ক নার্স এসোসিয়েশনের প্রধান শেরিডান গঞ্জালেজ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, আমরা সিনেমায় যেরকম অবস্থা দেখি এখন ঠিক তেমনই এক কঠিন সময় পার করছি। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষ এখন মিনিটের মধ্যে মরে যাচ্ছে।

পরিস্থিতি সামলাতে নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যানড্রু কুমো সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালকে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে সকল সরঞ্জাম ও কর্মী-চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী সব হাসপাতালে কাজ করতে পারবে। একইসঙ্গে রোগীর সংখ্যাও সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। এখনো এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তবে কাজ চলছে।

হাসপাতালগুলো আক্রান্তদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে উৎসাহিত করছে। অনেক সময়ই তাদের হাতে সময় খুব কম থাকে। দ্রুত কম্প্রেসার ও অক্সিজেন পাম্প লাগাতে হয় ফুসফুসে। কখনো এতে পাঁজরের হার ভেঙ্গে যায় কখনো রক্তনালীতে আঘাত লাগে। এখন পর্যন্ত যত মানুষকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বা ভর্তি করা হয়েছে তাদের ভেন্টিলেটর লেগেছে, সামনেও লাগবে। এবং সব চেষ্টার পরেও তারা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যেতে পারে। করোনা রোগিদের বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ন না হলে অন্য কারো সার্জারিও করছেন না এখন নিউ ইয়র্কের চিকিৎসকরা। ওয়ার্ডগুলোকে আইসিইউতে পরিণত করা হচ্ছে।

ওপর থেকেও নিয়মিত চাপ আসছে হাসপাতালগুলোর। রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবও। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন এই সংকট নেই। কিন্তু হাসপাতালগুলো বলছে, দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের ভেন্টিলেটরস ও মাস্ক। গত ১লা মার্চ নিউ ইয়র্কে প্রথম করোনা রোগি ধরা পরে। তখন মেয়রের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, নিউ ইয়র্কে এক লাখের বেশি এন-৯৫ মাস্ক, ১৯ মিলিয়ন সার্জিক্যাল মাস্ক, ৪০ হাজারের বেশি গ্লোভস, ৩৮ হাজার গাউন ও ৩৫০০ ভেন্টিলেটরস আছে। কিন্তু এখন তার সবই শেষের দিকে। সামনের দিনগুলোতে সংকট দ্রুতই কয়েকগুন হয়ে যাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ করার মত। ইতালিতে যা হয়েছে, নিউ ইয়র্কেও হয়ত তেমন শুধু যাদেরকে বাঁচানো সম্ভব তাদেরকেই চিকিৎসা দেয়ার কথা ভাবতে হতে পারে হাসপাতালগুলোকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877