স্বদেশ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গতকাল শনিবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ৭২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে তিন হাজার ৩৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৪ হাজার ৫৪৬ জনে। চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের ৮১ জনই হুবেই প্রদেশের। গত শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ৬৩৬ জন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অন্তত ২৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। চীনের বাইরে এতে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে ও হংকংয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না যায়, সে জন্য হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চীন। ওই অঞ্চলের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে চীনসহ গোটা বিশ্বের। হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হুবেইতে নতুন করে দুই হাজার ৮৪১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে প্রদেশটিতে মারা গেছেন ৬৯৯ জন, আক্রান্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫৩ জন। এ ছাড়া এই প্রদেশের রাজধানী উহানে নতুন করে একদিনে এক হাজার ৯৪৫ আক্রান্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়াসাস। বহু দেশেই করোনাভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতি না থাকাই বড় দুশ্চিন্তার কারণ বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত, পরীক্ষা এবং তাদের সেবা নিশ্চিতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো ঠেকাতে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’
এ দিকে বড় এয়ারলাইনগুলো চীন থেকে আসা ও যাওয়ার সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। জাপানে বিচ্ছিন্ন রাখা এক প্রমোদ তরীর ৬১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও ক্রু নিয়ে জাহাজটি দুই সপ্তাহ ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মার্কিন দূতাবাস এ কথা জানায়। দূতাবাসের মুখপাত্র এএফপি’কে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, করোনায় আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সী এক মার্কিন নাগরিক ৬ ফেব্রুয়ারি উহান নগরীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তবে সে নারী না পুরুষ তা উল্লেখ করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিদেশী ১৯ জন নাগরিক চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় তাদের পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
সংক্রমণ ধরা পড়ছে না পরীক্ষায়ও
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেককে পরীক্ষা করেও সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চীনের চিকিৎসকরা। চীনের একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রধান ওয়াং চেনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স অনেকের পরীক্ষার ফল ‘ফলস নেগেটিভ‘ আসার কথা জানিয়েছে। তিনি চীনের টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘অসুস্থদের যারা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সত্যিই আক্রান্ত, টেস্ট করে তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। ‘এখনো অনেকের লালা পরীক্ষা করে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। যার মানে সত্যিকার অর্থেই যতজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত, তার অর্ধেকের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ধরা পড়েনি।’
আলোচনায় বনরুই
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোথা থেকে শুরু হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাদুড়, ভোঁদরের পর এবার একদল চীনা গবেষক আলোচনায় এনেছেন ‘বনরুইয়ে’র নাম। বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের আরএনএ বিন্যাসের সাথে বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া করোনাভাইরাসের বিন্যাসের ৯৯ শতাংশ মিল পেয়েছেন দাবি করেছেন গুয়াংজু প্রদেশের সাউথ চীন এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।
গায়ে আঁশযুক্ত একমাত্র স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী বনরুইকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী। চীন ও ভিয়েতনামে কবিরাজি চিকিৎসায় পিঁপড়েখেকো এই প্রাণীর মাংস ও আঁশ ব্যবহার করা হয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি) আদি পোষক বাদুড় হলেও মানুষের মাঝে এর বিস্তারে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে বলে গুয়াংজুর গবেষকরা মনে করছেন। তাদের ধারণা, সেই প্রাণীটি হলো বনরুই। ভাইরোলজির ভাষায় এ ধরনের পোষক প্রাণীকে বলা হয় মধ্যবর্তী বাহক। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফলাফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।
আমদানি স্থগিত তুরস্কের
চীন থেকে সব ধরনের প্রাণিসম্পদ ও প্রাণীর চর্বি আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। গত শুক্রবার তুর্কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফারহেতিন কোচা এ ঘোষণা দেন। ফারহেতিন জানান, চীন থেকে দেশে ফেরা ৬১ তুর্কি নাগরিকের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, চাকরির জন্য তুরস্কে আসা সব চীনা নাগরিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের কাজের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তাদের ১৪ দিনের ছুটি ধরা হবে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।