শুক্রবার, ০৫ Jul ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে আত্মীয়তার গুরুত্ব

ইসলামে আত্মীয়তার গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন

পারিবারিক সূত্রে গাঁথা সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলা হয়। তবে সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরেই আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। পারিবারিক সম্পর্ক ছাড়াও অন্য কোনোভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। আবার নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, সেগুলোও আত্মীয়তার সম্পর্ক হিসেবে বিবেচ্য। ইসলামি আইনের বিচারে একজন মুসলমানের জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি পৃথিবীতে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ২২-২৩)

আত্মীয়-স্বজনের হক বা অধিকার সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান করে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদেরও। আর কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয় নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫৫৯)

হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা এমন একটি বিশেষ ভালো গুণ ও আল্লাহর আদেশের পালন, যা দেখে আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে রিজিকে সচ্ছলতা ও আয়ুতে বরকত দান করেন।

বস্তুত জীবনের সীমা দীর্ঘায়িত হোক চায় নাÑ এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রত্যেকেই চায় জীবনের আয়ু বৃদ্ধি হোক। বয়সের পরিসীমা আরও পরিব্যাপ্ত হোক। পৃথিবীতে সে আরও বেশিদিন টিকে থাকুক।

স্বভাবতই মানুষ আয়ুবৃদ্ধিতে যত চেষ্টা-প্রচেষ্টা করুক, জীবন একদিন ফুরিয়ে আসে। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.) সংক্ষিপ্ত জীবনকেও কীভাবে বরকতপূর্ণ করা যায়, তার উপায় বাতলে দিয়েছেন। আল্লাহর কথা সত্য, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কথা সত্য। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহ জীবন ও আয়ুতে নিশ্চয় বরকত দান করবেন। স্বল্প সময়েও বহু কাজ করার তাওফিক দেবেন।
অনেককে দেখা যায়, সাধারণ বিষয় নিয়েও ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখে। এমনকি কেউ কেউ তো ক্রোধের আতিশয্যে সারা জীবন দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ রাখে। অথচ এ ব্যাপারে আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা জায়েজ নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬২৯৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করে, আমার কিছু আত্মীয় এমন আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই বজায় রাখার চেষ্টা করি, ততই তারা ছিন্ন করে। যতই সৎ বা ভালো ব্যবহার করি, তারা ততই দুর্ব্যবহার করে। সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চায় না। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আর তুমি তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করে চলছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন।’ (মুসলিম)
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুলকে (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে শরিক কোরো না। নামাজ ভালো করে আদায় করো এবং যাকাত দাও। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখো।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩০৯)
সওয়াব-ফজিলত, সুসংবাদ ও সতর্কবাণীর হাদিস শুনে আমাদের বোধোদয় হওয়াটা স্বাভাবিক। আসুন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় যতœবান হই। পারস্পরিক বন্ধনকে আরও আন্তরিক ও অটুট করে তুলি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877