স্বদেশ ডেস্ক: গোড়া থেকে তীব্র প্রতিবাদে শামিল ছিলেন হায়দরাবাদের মিম সাংসদ। এমনকী সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশের পর আলোচনা চলাকালীনও শেষ পর্যায়ে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায় আসাদউদ্দিন ওয়েইসিকে। আর গভীর রাতে বিতর্কিত বিলটি পাশ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ঘোষণা করলেন, এর বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা করবেন। একই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসমের রাজনৈতিক সংগঠন এআইইউডিএফ।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ একেবারেই দেশের সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী, এতে মুসলিম নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতা ভুগবেন – এসব যুক্তি দিয়েই প্রথম থেকে সিএবি’র বিরোধিতায় সুর ধাপে ধাপে চড়িয়েছিলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সোমবার লোকসভা বিল পেশ রুখতে তিনি মরিয়া চেষ্টা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জার্মানির একনায়ক হিটলার ও ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়েনের সঙ্গে তুলনাও করতেও ছাড়েননি হায়দরাবাদের সাংসদ। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) প্রধান বলেন, “আমি অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করব, এই বিল যাতে পেশ না করা হয়। এহেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে দেশকে বাঁচান। না হলে পরবর্তী কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম হিটলারের কুখ্যাত নুরেমবার্গ জাতি আইন ও ডেভিড বেন গুরিয়েনের ইজরয়েলের নাগরিকত্ব আইনের মতোই এই বিলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে।” তাঁর এই আপত্তিজনক মন্তব্য শুনেই মিম প্রধানকে ভর্ৎসনা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সদস্যরা সাংসদসুলভ আচরণ করুন।
শেষপর্যন্ত ২৯৩-৮২ ভোটে বিলটি পেশ হয় এবং রাত পর্যন্ত চলে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক। এই সময়ে ফের একবার উত্তেজিত হয়ে বিলের কপিই ছিঁড়ে ফেলেন ওয়েইসি। বলেন, ”এটা দেশকে বিভাজিত করার চক্রান্ত। প্রস্তাবিত বিলটি দেশের সংবিধান বিরোধী।” তাঁর এই আচরণকে সংসদ অবমাননার পর্যায়ে ফেলেছেন বিজেপি সাংসদরা। মিম, কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ একাধিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ৩১১ – ৮০ ভোটে মাঝরাতে লোকসভায় পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯। মঙ্গলবার তা রাজ্যসভাতেও পেশ হবে। তা পাশ হলে, আইন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এসব পদ্ধতি আটকাতে বিলের বিরোধিতায় এবার দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন ওয়েইসি। সুপ্রিম কোর্টে তিনি এ নিয়ে মামলা করবেন বলে সূত্রের খবর।
ওয়েইসির পথেই হাঁটতে চলেছেন এআইইউডিএফ প্রধান তথা অসমের ধুবড়ির সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল। এমনিতেই এনআরসি’র ক্ষত এখনও দগদগে অসমের ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালির কাছে। নাগরিকপঞ্জি থেকে তাঁদের নাম বাদ পড়েছে। তারউপর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ পাশ হওয়ায় অশনি সংকেত দেখছেন তাঁরা। রাজধানী গুয়াহাটি থেকে শুরু করে গোলাঘাট, ডিব্রুগড়-সহ একাধিক এলাকায় মঙ্গলবার সকালেও জারি বিক্ষোভ। রাস্তায় মশাল হাতে প্রতিবাদ মিছিল চলছে। বন্ধ রাস্তাঘাট, বাতিল পরীক্ষা। সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করছে অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তবে তাদের থেকেও একধাপ এগিয়ে এআইইউডিএফ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে।