মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

এবার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দৃষ্টি এরদোগানের

এবার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দৃষ্টি এরদোগানের

স্বদেশ ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগর বিষয়ে লিবিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পাদিক চুক্তি জাতিসঙ্ঘে পাঠানো হয়েছে। শনিবার তিনি জানান, পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর এই চুক্তিতে ইতোমধ্যে তিনি স্বাক্ষরও করেছেন। গেজেট আকারেও প্রকাশ হয়েছে সেটি। শীঘ্রই চুক্তিটি কার্যকর হবে।

তুরস্কের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী ফাতিহ ডনমেজ ২ দিন আগে ঘোষণা করেছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে ওই অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করবে তুরস্কের অনুসন্ধানী জাহাজ।

গত ২৭ নভেম্বর তুরস্ক-লিবিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে। লিবিয়ায় জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃত ত্রিপোলি ভিত্তিক সরকারের কর্মকর্তারা চুক্তিতে সই করেছে।

তুরস্ক-লিবিয়ার এই চুক্তি বিরোধীতা করছে গ্রিস। গ্রিস পূর্বভূমধ্যসাগরকে নিজেদের সমুদ্রসীমা হিসেবে দাবি করছে। গ্রিসের পাশাপাশি সাইপ্রাস ওই সমুদ্রসীমায় খনিজ অনুসন্ধান করতে চাইছে। আর তুরস্ক বলছে, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা আইন মেনেই তারা লিবিয়ার সাথে চুক্তি করেছে এবং এর বাস্তবায়ন করবে।

তুরস্ক বলছে, পূর্ব ভূমধ্যসগারের তলদেশের হাইড্রোকার্বনের যে মজুদ রয়েছে তা সম্মিলিতভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্টন করতে হবে। এরদোগান সরকার মনে করে, হাজার কোটি ডলারের এই সম্পদ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক জোরদারের উপলক্ষ হতে পারে।

কিন্তু তুরস্কের এই দাবি মানতে চাইছে না গ্রিস। তারা এককভাবে ওই সম্পদের ওপর অধিকার দাবি করছে। এরপরই পূর্ব ভূমধ্যসাগরে খনিজ অনুসন্ধানের বিষয়ে লিবিয়ার সাথে চুক্তি করেছে তুরস্ক। ওই চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক ও লিবিয়ার উপকূল বরাবর একটি করিডোর সৃষ্টি করা হবে। ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন’ নামের যে করিডোরের একটি অংশ নিজেদের বলে দাবি করছে গ্রিস।

তবে গ্রিস বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিকোস পানিয়াতোপোলস বলেছেন, আমরা সব কিছুর জন্য প্রস্তুত। কেউ আমাদের সহযোগিতা করতে না এলেও আমরা একই পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি।

আর শনিবার ইস্তাম্বুলে একে পার্টির প্রাদেশিক প্রধানদের এক সম্মেলনে এরদোগান বলেছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আন্তর্জাতিক আইন অনায়ায়ী তুরস্ক তার অধিকার প্রয়োগ করে যাবে।

তুরস্ক তাদের এই পদক্ষেপে পাশে পেয়েছে লিবিয়ার সরকারকে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এরদোগান যে কূটনৈতিক সাফল্য দেখিয়েছেন তাতে বলা যায় ন্যাটো জোটকে ম্যানেজ করেই তিনি গ্রিসকে নিবৃত করতে পারবেন। কারণ সিরিয়ায় অভিযানের জন্য সব মহলের বিরোধীতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান এমনকি সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকারকে ম্যানেজ করে তুর্কি বাহিনী উত্তর সিরিয়ায় অভিযান চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সীমান্ত থেকে কুর্দি গেরিলাদের তাড়িয়ে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে তুরস্ক।

তাছাড়া ন্যাটো সম্মেলনেও সফল কূটনৈতিক তৎপরতা দেখিয়েছেন এরদোগান। নানা ইস্যুতে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের টানাপোড়েন থাকলেও ন্যাটো সম্মেলনে সফলভাবেই উৎরে গেছেন এরদোগান। কাজেই ন্যাটো সদস্য গ্রিস পূর্ব ভূমধ্যসাগরে খনিজ সম্পদ অনুসরণে তুরস্ককে বাধা দিতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৯৮৭ সাল থেকে আজিয়ান সাগরে খনিজ অনুসন্ধান নিয়ে তুরস্কের সাথে গ্রিসের টানাপোড়েন চলছে। ওই বছর দেশ দুটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিল। এবারের সঙ্কটটিও যাচ্ছে সেদিকে। গ্রিসের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই ঘটনা দুই দেশকে যুদ্ধের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গ্রিক কূটনীতিক আলজাজিরাকে বলেছেন, তুর্ক জাহাজ অনুসন্ধান শুরু করলে আমাদের জাহাজ তাতে বাধা দিতে পারে। আর তাতেই শুরু হতে পারে যুদ্ধ। কারণ এসব জাহাজ বহরের সাথে নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজও থাকবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877