ডা. দিদারুল আহসান: বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শীতকালে চামড়া থেকে পানি শুষে নেয় বায়ুম-ল। পানি শুষে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকে। আমাদের দেহের ৫৬ শতাংশই হলো পানি। আর এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বকের যেসব গ্রন্থি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে তা আর আগের মতো ঘর্ম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আরও শুকিয়ে যেতে থাকে। শীত এলে ত্বক ছাড়াও সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ঠোঁট নিয়ে। কমবেশি সবারই ঠোঁট ফাটে। সেক্ষেত্রে তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে ভেসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ঠোঁট ভালো রাখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো কখনও উচিত নয়। এতে ঠোঁট ফাটা আরও বেড়ে যেতে পারে। আর একশ্রেণীর লোকের শীত এলেই পা ফাটার প্রবণতা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পা শুকিয়ে যাওয়ামাত্র ভেসলিন মেখে দিন। এছাড়াও গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখলে পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে অনেক ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, যা তেল ও পানির একটি মিশ্রণ।
এতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ। যেমনÑপেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল অয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুইড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি। শীতকালে বাড়ে এমন একটি রোগের বিষয়ে এখন কিছুটা আলোচনা করা যাক। রোগটির নাম ‘ইকথায়োসিস’। ইকথায়োসিস আবার বিভিন্ন ধরনের আছে। তবে আমরা তার সবটায় না গিয়ে শুধু ইকথায়োসিস ভ্যালগারিস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করব। এটি জন্মগত একটি রোগ এবং রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ করা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ রোগে প্রতি হাজারে অন্তত একজন ভুগে থাকেন। নারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সমপরিমাণ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের হাত-পায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়িগুঁড়ি মরা চামড়া বা আঁশ পায়ের সামনের অংশে বা হাতের চামড়ায় লক্ষণীয়ভাবে ফুটে ওঠে। তবে হাত-পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। শীতকাল এলেই এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এ রোগে আক্রান্তদের হাত-পায়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট এবং মোটা, যা সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। এরই সঙ্গে তাদের থাকে অ্যালার্জিক সমস্যা। এ ধরনের রোগীর মধ্যে কারও কারও আবার নাক দিয়ে প্রায়ই পানি পড়া অর্থাৎ সর্দি সর্দি ভাব থাকবে। তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, তাদের পরিবারে অ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনও আছে। এ রোগটি কখনোই ভালো হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীত এলেই বেশি করে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা খুব বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। আর এটি পেতে যদি অসুবিধা হয়, তাহলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।