বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন

এখনো পৌঁছায়নি প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই

এখনো পৌঁছায়নি প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই

স্বদেশ ডেস্ক:

পঞ্চগড় জেলায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের চাহিদার ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪১১ কপি বইয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত গিয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮১ কপি। সব মিলিয়ে ১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বই গিয়েছে জেলাটিতে। জেলার পাঁচটি থানায় প্রাক-প্রাথমিকের শতভাগ বই গেলেও প্রথম শ্রেণির ৮৩ হাজার বইয়ের মধ্যে ২৭ হাজার, দ্বিতীয় শ্রেণির ৮৩ হাজারের মধ্যে ২৭ হাজার, তৃতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৬০ হাজারের মধ্যে ২৪ হাজার, চতুর্থ শ্রেণির ১ লাখ ৫১ হাজারের মধ্যে ১ হাজার এবং পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ৪৬ হাজারের মধ্যে ১ হাজার কপি বই পাঠানো সম্ভব হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমেশ চন্দ্র মজুমদার কালবেলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের ২০ শতাংশ বই আমরা পেয়েছি। অবশিষ্ট বই কবে পাব জানি না।

পঞ্চগড়ের মতো প্রায় একই অবস্থা অন্য জেলাগুলোতেও। অথচ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিকের সব বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, মাধ্যমিকের বইয়ের অবস্থা আরও করুণ। এখন পর্যন্ত এই স্তরের ৩০ কোটি বইয়ের মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে এনসিটিবির দায়িত্বে পরিবর্তন আসে। আগের জমে থাকা কাজ নতুন করে শুরু করতে হয়। বাতিল করে নতুন করে দরপত্র জমা নেওয়া হয় এবং কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ছাপার কাজ শুরু হওয়ার পর এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ শেষ হবে। এরপর তিনি বারবার একই প্রতিশ্রুতি ব্যক্তি করেছিলেন। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি। জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধ শেষ হলেও এখনো প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ হয়নি। মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ আরও পিছিয়ে। এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বেশ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পাঠ্যবই পাবে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে বাস্তবতা বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শেষ করা কঠিন হবে। বেশি তাড়াহুড়ো করলে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তবে, এবার সরকার বইয়ের মানে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রেসে অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের বই কেটে ফেলেছে এনসিটিবি। কিছু প্রেসে পাঠ্যবই ভিন্ন অন্য কিছু ছাপানোয় সেগুলো জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে। মান ধরে রাখতে চাইলে এবং দরপত্রের শর্ত মানতে গেলে বই ছাপানোর কাজ শেষ হতে এপ্রিলও গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনসিটিবির তথ্যানুসারে, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটির বেশি বই। এর মধ্যে প্রাথমিকের বই ৯ কোটি ১৯ লাখ, মাধ্যমিকের ৩০ কোটি ৯৬ লাখ। এসব বইয়ের মধ্যে প্রায় ১ কোটি বই ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

এনসিটিবির উৎপাদন শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার পর্যন্ত প্রাথমিকের ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৯২ কপি বইয়ের মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৯৫ কপি বই ছাপা হয়েছে। বই প্রস্তুত হয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ২৭ হাজার ৫২৫ কপি। এর মধ্যে সরবরাহের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৪৪৪ কপি বই। অর্থাৎ, এখনো প্রায় সাড়ে ৩ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। এগুলোর বেশিরভাগই চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির।

তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিকের ৬২ লাখ ১৮ হাজার বইয়ের মধ্যে ২০ লাখ, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ৭০ লটের প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ বইয়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ, এসব শ্রেণির অন্য ২৭ লটের ১ কোটি ২৮ লাখ বইয়ের মধ্যে ৪০ লাখ, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৪ কোটি ৩ লাখ বইয়ের মধ্যে ২ কোটি ১৪ লাখ এবং প্রাথমিকের পাঁচটি শ্রেণির সংযুক্ত লটের ১৩ লাখ বইয়ের মধ্যে ১০ লাখ বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই যেতে আরও দেরি হবে। কারণ, এখন সব প্রেসেই গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিকের, বিশেষ করে দশম শ্রেণির বই ছাপা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই চলে এসেছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই একটিও পাইনি।

অন্যদিকে, মাধ্যমিকের প্রায় ৩১ কোটি বইয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাপা হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৪ লাখ বই। এসব বইয়ের মধ্যে বাঁধাই শেষে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৫ হাজার বই। অর্থাৎ, এখনো প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো বাকি।

ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ কালবেলাকে বলেন, ঢাকার প্রতিটি থানায় নবম-দশম শ্রেণির তিনটি করে বই গিয়েছে। কোনো কোনো থানায় আরেকটু বেশিও গিয়েছে। এ ছাড়া, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৫ থেকে ৬টি করে বই এসেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877