রবিবার, ০৭ Jul ২০২৪, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন

দফায় দফায় কারিকুলাম পরিবর্তনে শিক্ষায় কী প্রভাব ফেলছে

দফায় দফায় কারিকুলাম পরিবর্তনে শিক্ষায় কী প্রভাব ফেলছে

স্বদেশ ডেস্ক:

আগের পরীক্ষাপদ্ধতি বাদ সহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে গত শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশে নতুন যে কারিকুলাম চালু হয়েছে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা নতুন ওই কারিকুলাম নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেও সরকার বলছে, নতুন বিধায় এটি বুঝতে সময় লাগছে।

শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি বোঝার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার তা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। এর ফলে পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই আছে অন্ধকারের মধ্যে।

অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে আপত্তি তোলেন অভিভাবকরা।

তবে সরকার বলছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে প্রস্তুত করতে এই উদ্যোগ তাদের।

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘আমরা মুখস্ত করার প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে এক দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই শিক্ষাক্রম চালু করেছি। কিন্তু এটি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা বেশি আসছে শহুরে বাবা-মায়েদের কাছ থেকে। সবাই এর বিরোধিতা করছে না।’

কিন্তু দফায় দফায় কারিকুলামে এরকম পরিবর্তনের ফলে শিক্ষার ওপর, শিক্ষার্থীদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

বিতর্ক শুরু যেভাবে
গত বছর প্রাথমিকভাবে প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। চলতি বছর থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন পদ্ধতি।

অভিভাবকরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলে গুগল ও ইউটিউব দেখে সেগুলো লিখে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানেরা।

রাজধানীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক রবিউল ইসলাম নামের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘এভাবে ইন্টারনেট দেখে যখন আমার ছেলে এগুলো লিখছে, তাতে ওর কতটুকু লাভ হচ্ছে আমরা তো সেটা বুঝতেও পারি না।’

নতুন এই পদ্ধতি অনেকেই বুঝতে না পেরে গাইড বইয়ের দিকে ঝুঁকছে বলে জানাচ্ছেন তারা।

শিক্ষকদের আপত্তি, নতুন এই পদ্ধতি চালুর আগে শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। অথচ শিখন, শেখানো ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। বইয়ের বিষয়বস্তুতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।

বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা পড়াচ্ছি, আমাদের কাউকে কাউকে নামমাত্র একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান করতে। আমাদের অবস্থা হয়েছে ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দারের মতো। প্রশিক্ষণ ছাড়াই যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একদম তাড়াহুড়া করে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। যে কারণে এই পদ্ধতি বুঝে উঠতে পারছে না শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই এমন একটা পদ্ধতি চালু না করে আরো পাইলটিং করে নতুন কারিকুলাম চালু করা হলে এত প্রশ্ন ও সমালোচনা তৈরি হতো না।’

মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে যেসব আপত্তি
নতুন শিক্ষাক্রমের যেসব বিষয় নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মূল্যায়ন পদ্ধতি।

বিশ্বের বেশ কিছু দেশের আদলে সাজানো হয়েছে নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে। এতে পাঠ্যবই, পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন।

এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন। অর্থাৎ সারা বছর শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে আগের মতো পরীক্ষা হচ্ছে না।

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়। পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়।

নতুন শিক্ষাক্রমে নিয়ে অভিভাবকদের একটি অংশ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শুরু থেকে। গত বছর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি দুলু বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আগে যেমন নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন ছিল। তখন শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়াশোনায় আগ্রহী হতো। তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকতো। এখন এসব না থাকায় বাসায় আর শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী হচ্ছে না। তাহলে ওরা কী শিখবে?’

নতুন পদ্ধতি পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি প্রথমে ছিল না। নানা সমালোচনার পর গত ১ জুলাই এটি নেয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা নির্ভর ও মুখস্ত নির্ভরতার কারণে আমাদের শিখন অর্জন হচ্ছিল না। শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি দীর্ঘস্থায়ী কিছু নয়। বিশ্ব পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষাপদ্ধতির ধরনও বদলে যায়। সে কথা বিবেচনা করেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তির মুখে একটি কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এপ্রিলের শেষদিকে ওই কমিটি একটি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে। যেখানে কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষারও সুপারিশ করেছে।

একইসাথে স্কুলভিত্তিক ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত করারও সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।

কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়কে জমা দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী তাদের কাজ করবে।’

কমিটির যে সুপারিশ করেছে সেখানে বলা হয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও আগের মতো মুখস্থ করে উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকবে না।

ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, একেকটি বিষয়ে দুই ঘণ্টার মতো লিখিত পরীক্ষা হতে পারে। বাকি তিন ঘণ্টা সময় কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমবে বলে আশা
আগের মতো পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকার কারণে এখন শিক্ষার্থীদের কেউ অকৃতকার্য হচ্ছে না। যারাই ক্লাস করছে, স্কুলে আসছে তারা সবাই পরবর্তীতে ক্লাসে উন্নীত হবে। পাস ফেলের সেই আগের অঙ্ক এখন কোনো স্কুলেই হবে না।

ওয়াহেদুজ্জামান নামে একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ওরকম কোনো পরীক্ষা নাই। অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে ছাত্রদের অকৃতকার্য হওয়া একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষা পদ্ধতিসহ নানা কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায় শেষ করলেও মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করতে পারছে না।

একটি উদাহরণ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ধরুন আমাদের দেশে প্রায় ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হচ্ছে। কিন্তু এসএসসি পাশ করছে মাত্র ২০ থেকে ২৩ লাখ শিক্ষার্থী। মাঝপথে এসব শিক্ষার্থী সেই পুরানো পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে ঝরে পড়ছিল। আমরা তাদের স্কুল ও পড়াশোনায় ধরে রেখে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চেয়েছি।’

শিক্ষার প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জের কারণেই প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন। এ কারণেই নতুন কারিকুলামে কার্যকরী বলেন তিনি মনে করেন।

তবে এভাবে নম্বর ব্যবস্থা না থাকায় একজন শিক্ষার্থী বাস্তবে কতটা শিক্ষা পাচ্ছেন, তা বোঝা কঠিন হবে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক।

বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে নম্বর পদ্ধতি না থাকার কারণে ইংরেজি-গণিত কিংবা সায়েন্সের সাবজেক্টে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে ভর্তি পরীক্ষায়।

তিনি বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় একেকটি ধরন থাকে। একটা শিক্ষার্থী যদি কোনো বিষয়ে দুর্বল থাকে সেটা বোঝা যায় পরীক্ষার মাধ্যমে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা এসব সাবজেক্টে দুর্বলতা না কাটাতে পারলে ভর্তি পরীক্ষায় গিয়ে বিপদে পড়তে পারে।’

তবে এটিকে বড় কোনো সঙ্কট হিসেবে দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন বাড়ছে কিংবা কমছে না। যারা বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থায় যাবে, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনও তো নির্দিষ্ট থাকবে। বিশেষায়িত শিক্ষায় যারা যাবে তাদের জন্য মেথডলজিও চেঞ্জ হবে ওপরের দিকে।’

স্বাধীনতা পরবর্তী ৭ বার পরিবর্তন
বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এবারই প্রথম নয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপস্তুক বোর্ড বা এনসিটিবি’র তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর দেশে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে সাতবার।

১৯৭৭ সালে প্রথম শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পর ১৯৮৬ সালে পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন করা হয়। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে রূপান্তর করা হয়, ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক স্তরে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন করা হয়।

পরে ২০০২ সালে প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের কিছু পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন করা হয়। এরপর ২০১২ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়। গত এক দশকে সেটিও পরিবর্তন করা হয়েছে।

এসব পরিবর্তনে নিয়ে বেশ অসন্তোষ রয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের। সংগঠনটি বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে একাধিকবার শিক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোনোটিরই কার্যকর সুফল মেলেনি। এ অবস্থার উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই সরকার প্রথমে জেএসসি, পিএসসি চালু করলো পরে আবার সেটি বাদ দিলো। আবার এবার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হলো। শিক্ষার্থীদের নিয়ে এত এক্সপেরিমেন্ট কেন চালানো হচ্ছে?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।

যদিও এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এক দশক আগে ২০১২ সালে শিক্ষাক্রমে পরির্বতন আনা হয়েছিল। তখন এমসিকিউ বাদ দিয়ে সৃজনশীল যুক্ত হয়েছে।’

তিনি বলছেন, ’২০১২ সালের পর ২০২৩ সালে যখন নতুন কারিকুলাম শুরু করছি, তখন কিন্তু একই শিক্ষার্থী দুইবার পরিবর্তন পায়নি। ফলে বার বার পরিবর্তন দেখতে হয়নি শিক্ষার্থীদের।’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যে শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, তার ভালো কিছু দিক ছিল। কিন্তু কিছু দুর্বলতাও আছে, যে কারণে এটি নিয়ে সমালোচনা বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বাস্তবায়ন করতে আরো বেশি সময় লাগবে।’

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877