স্বদেশ ডেস্ক: মুক্তি পাচ্ছে বহু প্রতীক্ষীত ছবি ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’। তার আগে শুটিং আর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় বলিউডের দেশি গার্ল প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সঙ্গী বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ রিলিজের আগে আপনার কাছে কোনটা বেশি এক্সাইটিং ছিল? এই হিন্দি ছবিতে, ভারতের কিছু শহরে শুটিং করা নাকি এই ছবি প্রোডিউস করা?
প্রিয়াঙ্কা: হিন্দি ছবিতে অভিনয় করা আমি সত্যিই খুব মিস করি। বলিউডের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতার গোটাটাই দারুণ। তা সে হিন্দি ছবির নাচ-গান, থিম, সেটআপ, ইমোশন যাই বলুন না কেন। কিন্তু যখন আমি ছবি প্রোডিউস করছি তখন দায়িত্বটা বেড়ে যায়। ফলে অভিনয় এবং প্রোডিউস করা- দুটোরই নিজস্ব আনন্দ রয়েছে। তবে আমার মনে হয় এখন সিনেমা এমন একটা ভাষা তৈরি করে নিয়েছে যেখানে হিন্দি ফিল্ম বা নন-হিন্দি ফিল্ম হিসেবে আলাদা করে দেখা হয় না। ভাল গল্পই শেষ কথা বলে। পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে বলেই, ভাল গল্প, ভাল স্ক্রিপ্ট সবকিছুর উপরে। এই মুহূর্তে বিনোদন জগৎ তাই বেশ ইন্টারেস্টিং জায়গা কাজ করার জন্য।
প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনি একজন সন্তানহারা মায়ের চরিত্রে। সেটা অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রিয়াঙ্কা: ইট ওয়াজ এক্সট্রিমলি চ্যালেঞ্জিং। সন্তান হারানোর দুঃখ ঠিক কতটা সেটা সত্যিই বোঝা মুশকিল, যতক্ষণ না কেউ এই ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই চরিত্রের সঙ্গে এমপ্যাথাইস করতে পেরেছি। শুটিং করতে গিয়ে এমন অনেকবার হয়েছে যেখানে শট দেওয়ার পর সেটে বসে হাউ হাউ করে কেঁদেছি। এই ছবিটা করতে গিয়ে আমার নতুন উপলব্ধি হয়েছে- আমি যাদের ভালবাসি, তাদের মূল্য এখন আমার কাছে অনেক বেশি এবং প্রতিটা মুহূর্ত তাঁদের সঙ্গে উদযাপন করতে ইচ্ছে করে।
প্রশ্ন: এই চরিত্রের জন্য কীভাবে নিজেকে প্রিপেয়ার করেছিলেন?
প্রিয়াঙ্কা: পরিচালক সোনালি বোসের সঙ্গে অনেক অনেক কথা বলেছি। সোনালি নিজেও তাঁর ছেলেকে কম বয়সে হারিয়েছে। তাই ও আমাকে এই চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এছাড়া আয়েশার আসল মা অদিতি চৌধুরির সঙ্গে লন্ডনে আমি সময় কাটিয়েছি। আমি নিজে একজন ইন্সটিংটিভ অ্যাক্টর। ইমোশনকে কম্পার্টমেন্টালাইজ করে সেটাকে ব্যবহার করে চরিত্র হয়ে উঠতে পারি। এবং ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ করতে গিয়ে আমাকে এটাই করতে হয়েছে কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়ে আমি এই শুটিংটা করেছি। যেটা করতে গিয়ে আমার সবচেয়ে অন্ধকার, বেদনার স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়িয়েছি।
আগের থেকে অনেক বেশি শান্ত হয়েছি এবং অনেক আনন্দে আছি। এতদিনকার কেরিয়ার এবং জীবনযাপনের পর আমি বুঝতে পারছি এই সময়টায় যতটা পরিপূর্ণ নিজেকে লাগছে সেটা আগে কখনও অনুভব করিনি। এর পুরো ক্রেডিট আমার বর নিকের।
প্রশ্ন: হ্যাঁ, পরিচালক সোনালি বোস নিজের সন্তানকে হারিয়েছিলেন। তিনি কীভাবে আপনাকে গাইড করেছিলেন?
প্রিয়াঙ্কা: স্ক্রিপ্টটা এতটাই ভাল যে অনেকটাই সেখান থেকে আমি পেয়েছি। তারপর সোনালির সঙ্গে কথা বলেছি। সোনালি প্রথমদিকে আমাকে অদিতির সঙ্গে দেখা করাতে চায়নি। সেই সময় সোনালির অভিজ্ঞতাই নিজের মতো করে অবচেতনে গুছিয়ে রাখছিলাম। তারপর যখন অদিতির সঙ্গে দেখা হয় তখন বুঝতে পারি আমার মা ড. মধু চোপড়ার সঙ্গে তাঁর অনেক মিল রয়েছে। এই সবকিছু আমাকে ছবির ‘অদিতি চৌধুরি’ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: আপনার পরিচালক এবং কো-অ্যাক্টর ফারহান আখতারের সঙ্গে অনেকদিন পর কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
প্রিয়াঙ্কা: ফারহানের সঙ্গে কাজ করাটা সবসময় দারুণ মজার। কিন্তু প্রথমদিকে আমি একটু ভয়ে-ভয়েই ছিলাম। কারণ পরিচালক এবং অ্যাক্টর হিসেবে ও প্রচন্ড সেনসিব্ল। বিনোদনে এমন কিছু নেই যা ফারহান করতে পারে না। অভিনয়, পরিচালনা, গান- সবকিছুতেই ও দুর্দান্ত। তাছাড়া সেটে ফারহান থাকা মানেই দারুণ মজার সব জোক্সর অফুরান সাপ্লাই।
প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কা আপনার বিয়ে হয়েছে এক বছর হয়ে গেল। কিছু কি বদলেছে?
প্রিয়াঙ্কা: আমার নিজেকে আগের থেকে অনেক বেশি পরিপূর্ণ মনে হয়। এবং সেটা দেখে লোকে বুঝতে পারে। আগের থেকে অনেক বেশি শান্ত হয়েছি এবং অনেক আনন্দে আছি। এতদিনকার কেরিয়ার এবং জীবনযাপনের পর আমি বুঝতে পারছি এই সময়টায় যতটা পরিপূর্ণ নিজেকে লাগছে সেটা আগে কখনও অনুভব করিনি। এর পুরো ক্রেডিট আমার বর নিকের। ওর প্রেজেন্সটাই খুব শান্তির। কাজ যদিও খুব বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি আমার সমস্তটা দিয়ে চেষ্টা করি আমার পরিবার ও বরের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় স্পেন্ড করতে।
প্রশ্ন: সাধারণত অভিনেতারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা হতে চান না। কিন্তু আপনারা খুব সহজভাবেই নিজেদের প্রেমের প্রকাশ করে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা আলাদাভাবে আপনাদের মানসিকভাবে সাহায্য করে?
প্রিয়াঙ্কা: অফকোর্স, ইট ডাজ। নিকের মতো কনসিডারেট মানুষ আমি দেখিনি। ও যাই করে আমাকে সবসময় আগে রাখে। প্রত্যেকদিন ঘুম থেকে ওঠাটা আমার কাছে তাই এত সুখের কারণ আমি জানি আমার পাশে এমন একজন মানুষ আছে যে নিজের আগে আমার কথা ভাবে। উই আর লাইক ইচ আদার’স ইন ইয়াং। অর্থাৎ একে অপরের পরিপূরক। এবং প্রত্যেকেই জীবনে তেমন মানুষ চায়।
প্রশ্ন: আপনি হলিউডে গিয়ে যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মনে হয় না কোনও ভারতীয় অভিনেতা সেটা করতে পেরেছেন। ‘অ্যালেক্স পেরিশ’-এর চরিত্রে অভিনয় করা আপনার জীবন কতটা বদলে দিয়েছে?
প্রিয়াঙ্কা: অ্যালেক্স পেরিশ-এর চরিত্রে অভিনয় করা যতটা মজার ছিল ততটাই ফিজিক্যালি এবং ইমোশনালি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাছাড়া আমেরিকান টেলিভিশনের জন্য এটাই ছিল আমার প্রথম শো এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই শো মহিলাদের লিড চরিত্রে অভিনয় করার রাস্তা করে দিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার নিজের বিয়ে থেকে ইন্সপায়ার হয়ে একটা ছবি করছেন শুনলাম। বিষয়টা একটু বলবেন?
প্রিয়াঙ্কা: হ্যাঁ, একটা ‘রমকম’ করার প্ল্যান করছি। আমেরিকান অভিনেত্রী, কমেডিয়ান লেখিকা মিন্ডি কেলিং-এর সঙ্গে এই ছবির কথা চলছে। যেটা আমি প্রোডিউস করছি। আমি মিন্ডির হিউজ ফ্যান। একদিন লাঞ্চে ওঁর সঙ্গে মিট করে আমার বিয়ের গল্প করছিলাম, সেখান থেকেই এই ছবি করার আইডিয়াটা তৈরি হয়। ইট’স আ বাডি কমেডি বিটুইন টু গার্লস ট্র্যাভেলস ফ্রম ইউএস টু ইন্ডিয়া ফর অ্যান এনরমাস ওয়েডিং লাইক মাইন।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনি পরিচালনাও করতে চান?
প্রিয়াঙ্কা: পরিচালনার বিষয়টা ভাবলে আমার নার্ভাস লাগে। কারণ এটা বিশাল দায়িত্ব। এই মুহূর্তে অ্যাক্টিং থেকে প্রোডাকশনে এসেছি। আশা করি সেখান থেকে পরিচালনাতেও একদিন যাব। বাট দিস ইজ নট সামথিং আই অ্যাক্টিভলি থট অ্যাবাউট।
প্রশ্ন: নতুন আর কী কাজ করছেন?
প্রিয়াঙ্কা: রবার্ট রডরিগেজ-এর পরিচালনায় একটা কিড সুপারহিরো ছবিতে অভিনয় করলাম। এই ছবিতে পেদ্রো প্যাস্কাল এবং ক্রিশ্চিয়ান স্লেটারও রয়েছেন। এছাড়া মিন্ডি কেলিং-এর সঙ্গে ‘হোয়াইট টাইগার’-এর অ্যাডাপটেশন এবং ‘রমকম’টা করছি। একটি আমেরিকান টিভি শো করা নিয়ে কথা চলছে। এছাড়া আমেরিকায় আরও দুটো টিভি শো প্রোডিউস করব যেখানে আমি অভিনয় করছি না।