রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১২ অপরাহ্ন

বেদনা ও ত্যাগের গল্পের অসাধারণ চিত্রায়ণ

বেদনা ও ত্যাগের গল্পের অসাধারণ চিত্রায়ণ

স্বদেশ ডেস্ক:

মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ পর্যন্ত যে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘জয়যাত্রা’ অন্যতম। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সাধারণ নিরীহ মানুষের অসহায় অবস্থা, বেদনা ও ত্যাগের গল্প অসাধারণভাবে চিত্রিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর যথার্থ প্রতিফলন ঘটিয়ে এর কাহিনি এবং সংলাপের জীবনঘনিষ্ঠতা এক অন্যরকম মুগ্ধতার জন্ম দেয়। ‘জয়যাত্রা’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০৪ সালের ১৫ নভেম্বর। আমজাদ হোসেনের কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা, সংলাপ এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন তৌকীর আহমেদ। ছবিটি অর্জন করেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ আরও অনেক সম্মাননা। দেশের বাইরের বিভিন্ন উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি।

চলচ্চিত্রের শুরুতেই এ দেশের হাজারটির মাঝে একটি ছোট্ট সবুজ গ্রামের ছবি এঁকেছেন চলচ্চিত্রকার। শান্তি ও সম্প্রীতির এক কোমল পরিবেশ বিরাজ করছিল সেখানে, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সাংসারিক মানুষ সুখে দিনযাপন করছিল, তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছিল। দেশের রাজনীতি কিংবা হালহকিকত নিয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সাথেও তাদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। সেই শান্তিপূর্ণ গ্রামটিতেই এক রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে হাজির হলো। তারা সারা গ্রাম জ্বালিয়ে দিল। অনেকে প্রাণ হারাল। এর মাঝে যারা বেঁচে গেল, তারা আশ্রয় নিল এক নৌকায়। আপন দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ভারত সীমান্ত লক্ষ্য করে চলতে শুরু করল নৌকা। এই মানুষগুলোর অসহায়তা, বেঁচে থাকার সংগ্রাম, মনোজাগতিক দ্বন্দ্ব এবং বিপদসংকুল পথ অতিক্রমের যাত্রার গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘জয়যাত্রা’।

‘জয়যাত্রা’ সিনেমায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সম্পৃক্ততা ছিল। যুদ্ধের আয়োজন ছিল ব্যয়সাপেক্ষ। তিন বাহিনী ছবিতে যে সহযোগিতা করেছে এর জন্য কোনো পয়সা নেয়নি। ৭৫ লাখ টাকা বাজেটে ছবির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রি-প্রোডাকশন ও শুটিংয়ের একটা পর্যায়ে বাজেট ফুরিয়ে যায়। তৌকীর আহমেদ পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার নেয়। ১৫ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণও নিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে ছবি শেষ করেছিলেন। অভিনয়শিল্পীরা কোনো পারিশ্রমকি নেয়নি। এ নিয়ে পরিচালক বলেন, ‘মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রÑ তিন মাধ্যমেই আমি কাজ করেছি। সব মাধ্যমে কাজ করেছি বিধায় সুবিধা হয়েছে। বেশির ভাগ অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি আমার প্রথম সিনেমায় নিলাম সহকর্মীদেরই। তারা মঞ্চের, পরীক্ষিত। সিনেমায় কাজ করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মোশাররফ করিম, আবুল হায়াত, মাহফুজ আহমেদ, আজিজুল হাকিম, বিপাশা হায়াত, আহসান হাবিব নাসিম, ইন্তেখাব দিনার, চাঁদনীসহ আরও অনেকে। পুরো দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ছবির বাজেট এত কম ছিল যে শিল্পীদের কোনো টাকা দিতে পারিনি। শুটিংয়ের আগে এ ব্যাপারে তাদের বলেও নিয়েছিলাম অবশ্য। তারা আমার কথা শুনে রাজি হন। বলতে পারেন, নিজ উদ্যোগে তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করেছেন।’

সিনেমায় ৬০ ভাগ শুটিং হয়েছিল বগুড়ার বাঙালি নদীতে। ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা একটি নৌকা দেখেছেন। একটি নৌকার দৃশ্যধারণ করার জন্য আশপাশে সাতটা ট্রলার থাকত। বলা হয়, নৌকায় শুটিং সবচেয়ে কঠিন। কারণ নৌকা প্রতিমুহূর্তে তার অবস্থান পরিবর্তন করে। ঢেউয়ের সঙ্গে, বাতাসের সঙ্গে নৌকার স্থান পরিবর্তন হয়। তার ওপর ভারী ক্যামেরা আর যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা! একটি নৌকার দৃশ্য ধারণের জন্য সাতটি ট্রলারের একটিতে থাকত ক্যামেরা। একটিতে জেনারেটর ও লাইট আর একটিতে অভিনয়শিল্পী যার যখন দৃশ্যধারণ ছিল, তখন সে নৌকায় উঠত। একটিতে চা-পানি, খাওয়াদাওয়ার। আরেকটিতে থাকত পুলিশ। শুটিংয়ের সময় পাড়ে জড়ো হওয়া মানুষকে সামাল দিত পুলিশ। এভাবে সাতটা ট্রলার স্ট্যান্ডবাই থাকত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877