শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

কুমারীপূজা আজ

স্বদেশ ডেস্ক:

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী আজ রবিবার। দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ দিন এটি। রামকৃষ্ণ মিশনগুলোতে কুমারীপূজা আর দেবীর সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দেবীশক্তির বন্দনা ও অসুর বধে অশুভ শক্তি খ-নের প্রত্যয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের এই মহাঅষ্টমী পালিত হবে।

এর আগে গতকাল শনিবার সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ, মহাস্নান, সপ্তমী পূজা ও সন্ধ্যারতির মধ্য দিয়ে সারাদেশের ম-পগুলোয় পালিত হয়েছে মহাসপ্তমী। শাস্ত্র অনুযায়ী সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্য দিয়ে সপ্তমী কল্পারম্ভ শুরু হয়। এদিন সকালে ষোড়শ উপাদান ও নবপত্রিকা স্নানান্তে দেবীকে আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। চক্ষুদান করা হয় ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার। এর পর দেবীর পায়ে কয়েক দফায় অঞ্জলি প্রদান করেন উপবাসরত ভক্তরা। এ ছাড়া দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে ভক্তরা অর্চনা করেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, মহাসপ্তমীতে এই আচারের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কৃষি, খনিজ, বনজ, জলজ, প্রাণিজ ও ভূমিসম্পদ রক্ষার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। সপ্তমীলগ্নে নবপত্রিকা প্রবেশ একটি ‘প্রতীকী’ পূজা। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা । এ পূজায় কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধানÑ এ নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড় বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড়ের সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তার কপালে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গা প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে প্রতিফলিত প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।

সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি ম-প ঘুরে সর্বত্র দেখা গেছে উৎসবের ছোঁয়া। নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারি ও ভক্তদের ছিল ব্যাপক ভিড়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ ভিড় ছিল উপচেপড়া। সন্ধ্যায় ম-পে ম-পে শুরু হয় আরতির ধুম ও ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান। ধূপতি হাতে ধুনচি নাচে মেতে ওঠেন সবাই। আগমনী গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট হয়ে ওঠে সারাদেশের ৩১ হাজার ৩৯৮টি ম-প। পূজাম-পে রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। মূলত দুর্গোৎসবের মূল পর্ব সপ্তমীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে ও মেলায় আসা শুরু করেছেন। উৎসবপ্রিয় বাঙালি সনাতন সম্প্রদায় পূজার আনন্দে মেতে উঠেছে। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার পূজাম-পগুলোও এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় পূজাম-প হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-পে গতকাল মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও দুস্থ মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে আজ দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন। এদিন সকাল ১০টায় রামকৃষ্ণ মিশন ম-পে অনুষ্ঠিত হবে কুমারীপূজা। দুপুর ২টা ২৭ থেকে ৩টা ১৪ মিনিটের মধ্যে হবে সন্ধিপূজা। শাস্ত্র অনুযায়ী, নারীকে শক্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক বিবেচনা করা হয়। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক স্বরূপ। পৃথিবীতে সব নারীর মাঝেই মা রূপে বিরাজ করেন দেবী দুর্গা। আর সেই দেবীকে সম্মান জানাতেই অষ্টমীতে আয়োজন করা হয় কুমারীপূজা। সাধারণত ১ থেকে ১৩ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজায় উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন।

শাস্ত্রমতে, কোলাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে কুমারীপূজার উদ্ভব। এই কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সময় দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্ম নিয়ে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এর পর থেকেই মর্ত্যে কুমারীপূজার প্রচলন। অষ্টমী পূজার দিন জবরদস্তি ও অকল্যাণের প্রতীক মহিষাসুর বধের চূড়ান্ত পর্যায়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত হয়। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘কুমারী মা’কে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এর পর ‘কুমারী মা’র চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যরে শঙ্খপত্রকে সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এর পর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাসÑ এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’পূজায়।

এর আগে ষষ্ঠ তিথিতে বেলতলায় বিহিত পূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। আগামীকাল সোমবার মহানবমী। মঙ্গলবার সকালে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877