মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০২:০১ অপরাহ্ন

প্রাথমিক স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে ক্ষোভ অভিভাবকদের

প্রাথমিক স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে ক্ষোভ অভিভাবকদের

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণীতে অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষায় কঠিন আর জটিল প্রশ্নপত্রের বিষয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে অনেক দিন ধরে। বিশেষ করে নামকরা অনেক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার প্রশ্নপত্র এত কঠিন করা হচ্ছে যে, শিশুদের প্রশ্নপত্র দেখে অনেক অভিভাবকের মাথা ঘুরে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষিত অনেক অভিভাবকও রাজধানীর অনেক স্কুলের তৃতীয়, চতুর্থ আর পঞ্চম শ্রেণীর প্রশ্নপত্র দেখে এর উত্তর কী হবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

রাজধানীর বনশ্রীতে অবস্থিত নামকরা একটি স্কুলের শাখায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চতুর্থ শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে একজন অভিভাবক বলেন, আমার মনে হয় যুক্তরাজ্যে যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি তাদের ছেলেমেয়েদেরও চতুর্থ শ্রেণীতে এমন কঠিন পরীক্ষা নেয়া হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চ শিক্ষিত এ অভিভাবক চতুর্থ শ্রেণীর সব বিষয়ের প্রশ্নপত্র এ প্রতিবেদককে দেখিয়ে বলেন, এগুলো চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশ্ন হতে পারে না কোনো অবস্থাতেই। এক দিকে প্রশ্ন জটিল কঠিন তার ওপর উপযুক্ত সময় দেয়া হয় না। ছোট ছোট শিশুরা আড়াই ঘণ্টায় এত প্রশ্নের উত্তর লিখে শেষ করতে পারে না। আর সৃজনশীলের নামে অনেক প্রশ্ন থাকে সম্পূর্ণরূপে বইয়ের বাইরে থেকে। ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে জানা ছাড়া তাদের পক্ষে এগুলোর উত্তর দেয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

চতুর্থ শ্রেণীর গণিত প্রশ্নপত্রটি পূর্ণ চার পৃষ্ঠার। এ বিষয়ে একজন অভিভাবক বলেন, প্রশ্ন সহজ হলেও একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে এত গণিতের উত্তর আড়াই ঘণ্টায় লেখা সম্ভব নয়। আর বাস্তবতা হলো অনেক প্রশ্নই বেশ কঠিন।

চতুর্থ শ্রেণীর ইংরেজি প্রশ্নপত্রও চার পৃষ্ঠার। এখানে দু’টি অনুচ্ছেদ দেয়া রয়েছে, যা থেকে মোট ৪৫ নম্বরের উত্তর করতে হবে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে বইয়ের বাইরে থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রশ্নে ব্যাকরণ বিষয়ে সম্পূর্ণ আলাদা প্রশ্ন থাকার পরও অনুচ্ছেদের প্রশ্নের মধ্যেও ব্যাকরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্যারাগ্রাফ ও চিঠি লিখন বিষয়ক আলাদা প্রশ্ন।

একজন অভিভাবক জানান, আমরা যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠি তখন ইংরেজিতে প্রথম দরখাস্ত লিখন ছিল। ইরেজিতে চিঠিপত্র লেখা ছিল না। আর এখন চুতর্থ শ্রেণীতেই যোগ করা হয়েছে চিঠি লেখা। এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।

ব্যাকরণ বিষয়ক প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বাক্যকে প্রেজেন্ট টেন্স থেকে পাস্ট টেন্স করা, প্রেজেন্ট টেন্স থেকে প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস করা, প্রেজেন্টে টেন্স থেকে প্রেজেন্ট পারফেক্ট করা, প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস থেকে প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট করা, বাক্যের মধ্যে অ্যাডজেকটিভ নির্ণয় প্রভৃতি।

একজন অভিভাবক বলেন, ব্যাকরণ বিষয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় তাতে একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র ব্যাকরণ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকলেই হবে তা নয় বরং ইংরেজি ভাষা সম্পর্কেও তাদের ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। তা না হলে ইংরেজি বিষয়ে যেসব প্রশ্ন স্কুলের পরীক্ষায় করা হয় তার সঠিক উত্তর দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর বাস্তবতা হলো অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে পড়ার যে চাপ তাতে একজন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিশুর পক্ষে ইংরেজিতে এত দক্ষ হয়ে ওঠা অসম্ভব। গণিতেও একই অবস্থা। ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন দেখলে মনে হয় এ দেশের শিশুরা ইংরেজিতে মাস্টার হয়ে গেছে। পরীক্ষায় ইংরেজি প্রশ্নই শুধু কঠিন করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে ইংরেজি ভাষা এত ভালো করে শেখার সুযোগ ও আয়োজন নেই শিক্ষা ব্যবস্থায়।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকার তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় দেয়া হয় তৃতীয় শ্রেণীর শিশুদের জন্য। অথচ পরীক্ষায় যে প্রশ্ন আসে তা কোনো অবস্থাতেই দেড় ঘণ্টায় লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। ক্ষুব্ধ এ অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে সব প্রশ্নের উত্তর পারলেও সময় স্বল্পতার কারণে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেনি। অন্য অভিভাবকরাও আমাকে জানিয়েছেন তাদের শিশুরা সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেনি শুধু সময় স্বল্পতার কারণে।

বনশ্রী এলাকার পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার প্রশ্ন বিষয়ে বলেন, মনে হয় এগুলো এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন। বিশেষ করে ইংরেজি আর গণিতের প্রশ্ন দেখে মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা বলে জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877