স্বদেশ ডেস্ক:
ইমপিচমেন্ট তদন্তের অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউজের ওপর আইনি সমন জারির ঘোষণা করার পর ডেমোক্র্যাটদের ওপর ক্ষুব্ধ বাক্যবাণ ছুঁড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইউক্রেনের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের যোগাযোগের তথ্য প্রমাণ চেয়েছে, যা ওই ইমপিচমেন্ট তদন্তের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নেতাদের বিরুদ্ধে ‘অসততা’, এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন।
তবে ওই তদন্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন যে, তারা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বলেছেন?
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সলি নিনিস্তোর সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারকে ‘ঠাণ্ডা মাথার দুর্নীতিবাজ’ বলে বর্ণনা করেন।
হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্কিফকে তিনি, ‘চতুর স্কিফ’, ‘কৃপণ’ এবং ‘তার উচিত লজ্জার সাথে অফিস থেকে পদত্যাগ করা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ”সত্যি কথা বলতে, তাদের (কংগ্রেস) উচিত তার ব্যাপারে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া।”
ট্রাম্প আরো বলেছেন, তার বিশ্বাস স্কিফ তথ্যফাঁসকারীর অভিযোগ ‘লিখতে সহায়তা’ করেছেন, যেখানে কোনো প্রমাণ তুলে ধরা হয়নি।
”ওই ব্যক্তিকে সবার খুঁজে বের করা উচিত, কারণ আমার মতে ওই ব্যক্তি একজন গুপ্তচর,” ট্রাম্প বলেছেন।
কংগ্রেসকে তিনি সবসময় সহযোগিতা করবেন বলে জানালেও, ওই তদন্তকে তিনি ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আমেরিকান জনগণের ওপর ‘জালিয়াতির অপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
হোয়াইট হাউজে রয়টার্সের একজন সংবাদদাতার সাথেও তর্কে জড়ান ট্রাম্প, যিনি তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলতে তিনি কি মনে করেন।
ট্রাম্প বলেন, যারা রাশিয়া তদন্তে অংশ নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হয়তো তাকে অনেক মামলা করতে হবে।
এর আগে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আর স্কিফের বিরুদ্ধে টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, তারা ‘বাজে কথায়’ মনোযোগ দিচ্ছে।
তিনি ন্যান্সি পেলোসিকে তার নিজের শহর, সানফ্রান্সিসকোর দিকে মনোযোগ দিতে বলেন, যে শহরকে তিনি গৃহহীন মানুষের ‘তাঁবু শহর’ বলে বর্ণনা করেছেন।
যা নিয়ে তদন্ত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যেলেনস্কির সময় গত ২৫ জুলাই টেলিফোন আলাপের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন এবং তার ছেলের ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ইউক্রেনের একটি গ্যাস প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তার ছেলে। যদিও তাদের ব্যাপারে অন্যায় কিছু পাওয়া যায়নি।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওই তথ্য ফাঁস করার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ইমপিচমেন্ট তদন্ত শুরু করে ডেমোক্র্যাটরা।
তাদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি বন্ধু দেশকে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে ট্রাম্প রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটরা কী বলছেন?
কংগ্রেসের তদন্তে বাধা তৈরির জন্য হোয়াইট হাউজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ডেমোক্র্যাটরা এবং নথিপত্র হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছে, যে কারণে তাদের সমন পাঠিয়ে হাজির করার হুমকি দেয়া হয়েছে।
হাউজ ওভারসাইট কমিটির চেয়ারম্যান এলিজা কামিংস বলেছেন, ”আমি এসব পদক্ষেপকে হালকাভাবে দেখছি না।”
”গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কমিটি আশা করেছিল যে, আমাদের অনুরোধের নথিপত্র স্বেচ্ছায় দেয়া হবে। কিন্তু হোয়াইট হাউজ তা করেনি-এমনকি কমিটির অনুরোধে সাড়াও দেয়নি।”
সমন জারি করা হলে ইউক্রেনের সাথে আলাপ সম্পর্কিত ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপ এবং ভারপ্রাপ্ত চিফ অফ স্টাফ মাইক মুলভানির যোগাযোগের সকল নথিপত্র হাজির করার জন্য বলা হবে।
ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরে পেলোসি এবং স্কিফ বলেছেন, ”আমরা অযথা এখানে আসিনি” এবং এই তদন্তের উদ্দেশ্য কাউকে টেনে ধরা নয়।
তথ্য ফাঁসকারীর ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘এটা সাক্ষীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা’ এবং সহিংসতার জন্য প্ররোচনা দেয়া।
ইমপিচমেন্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে তার অফিস থেকে রাজনৈতিকভাবে অপসারণে কংগ্রেসের দুইটি ধাপের প্রথমটি হচ্ছে ইমপিচমেন্ট।
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভ যদি ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলে সিনেট একটি বিচার কার্যক্রম আয়োজন করতে বাধ্য হবে।
প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে সিনেটে দুই তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। তবে এই ক্ষেত্রে সেটার সম্ভাবনা কম কারণ ট্রাম্পে পার্টি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট হয়েছিল। তারা হলেন বিল ক্লিনটন এবং অ্যান্ড্রু জনসন, কিন্তু সিনেটে তারা দোষী প্রমাণিত হননি এবং ক্ষমতা থেকেও সরে যেতে হয়নি।
ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট।