স্বদেশ ডেস্ক;
ঢাকার বাতাসে ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। প্রধানত যানবাহনের ধোঁয়া থেকে ভারী ধাতু নির্গমন হচ্ছে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। আন্তর্জাতিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুসারে বাতাসে ভারী ধাতুর পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ পর্যন্ত সহনীয়। পার্টিকুলেট মেটার (পিএম) ২.৫, ১০০’র বেশি হলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গতকাল সোমবার নতুন বাজারের মাদানী এভিনিউয়ের মার্কিন দূতাবাস এলাকায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পার্টিকুলেট মেটার (পিএম) ২.৫ ছিল নতুন বাজার এলাকায়। মার্কিন দূতাবাসে রক্ষিত এয়ার কোয়ালিটি পরিমাপ যন্ত্রের তথ্য থেকে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টায় মার্কিন দূতাবাস এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ১৫৩। বেলা ১টায় ছিল ১৪১, বেলা ২টায় ছিল ১২১, বেলা ৩টায় ছিল ১১৬ এবং বিকেল ৪টায় ছিল ১০৮। বিকেল ৫টায় কমে চলে আসে সহনীয় মাত্রায়। এ সময় অবশ্য যানবাহন চলাচল কিছুটা কমে আসে। আবার গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় একই এলাকায় একিউআই ছিল ১৫৭, সন্ধ্যা ৭টায় ছিল ১৫২। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মাদানী এভিনিউ এলাকায় যানবাহন চলাচল অনেক বেশি থাকে। আবার রোববার রাত ৮টায় একিউআই ছিল ১১৬ এবং ৯টায় ১০৪। আবার রাত ৯টার পর থেকে ট্রাক চলাচল বেড়ে যায়। রোববার রাত ১০টায় মাদানী এভিনিউয়ের একিইআই ছিল ১৫২, রাত ১১টায় ছিল ১৩৮ এবং রোববার রাত ১২টায় ছিল ১০৪। এটা নির্ভর করে যানবাহন চলাচলে কম-বেশি হওয়ার কারণে।
সাধারণত শিল্পকারখানা এবং যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া থেকে বেশি বায়ু দূষিত হয়ে থাকে। শিল্পকারখানার মধ্যে ইটাখোলা, সার কারখানা, চিনিকল, কাগজকল, পাট ও টেক্সটাইল মিল, স্পিনিং মিল, ট্যানারি, ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট কারখানা, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কারখানা যেমন ওষুধ কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং কালখানা, মেটাল ওয়ার্কশপ এবং কাঠ চেরাই কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়া কাঠের ধুলা। শুধু সার কারখানা ছাড়া উল্লিখিত সব কারখানার অস্তিত্ব রয়েছে রাজধানীর মধ্যে অথবা এর আশপাশে। এসব কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে নানা ধরনের রাসায়নিক কণা। ট্যানারি থেকে নির্গত হচ্ছে হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, ক্লোরিনসহ অন্যান্য দুর্গন্ধযুক্ত রাসায়নিক।
এখনো রাজধানীতে চলছে দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মোটরসাইকেল, টেম্পো, মিনিট্রাক, মিনিবাস। রাজধানীতে নতুন বডি তৈরি করে তাতে পুরনো ইঞ্জিন বসিয়ে বাস ও ট্রাক চালানো হচ্ছে। ডিজেল চালিত যানবাহন থেকে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। এই যানবাহনগুলো নির্ধারিত নির্গমন সীমা লঙ্ঘন করছে। এসব যানবাহনের ধোঁয়ার মধ্যে থেকে যাচ্ছে কার্বন পার্টিকল। উল্লেখ্য দুই স্ট্রোকের ইঞ্জিন জ্বালানি পুরোপুরি পোড়াতে পারে না। কিছু ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে ছেড়ে দেয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের নির্ধারিতমানের চেয়ে ঢাকায় বায়ুদূষণ ১০ গুণ বেশি। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর রাজধানীর দুই হাজার ১৪০টি যানবাহন পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ডিজেল চালিত যানবাহনগুলো দূষিত বায়ু নির্গমনে সরকার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করছে। পুরনো ইঞ্জিন বিশিষ্ট যান নিষিদ্ধ করতে পরিবেশ অধিদফতর অনেক আগেই সুপারিশ করেছিল কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কম মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার, সব ধরনের পুরনো ইঞ্জিনের যানবাহন আমদানি নিষিদ্ধ করা এবং ইঞ্জিনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছিল পরিবেশ অধিদফতর থেকে।