স্বদেশ ডেস্ক: কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এখন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পদবাণিজ্য, মাদকসেবনসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত নেতারা। সেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তকমা ঘুচিয়ে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পড়েছে ছাত্রলীগের এই নতুন নেতৃত্বের ওপর। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের রেকর্ড ভেঙে সুনামের ধারায় কি ফিরে আসতে পারবে ছাত্রলীগ- রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এখন এমন প্রশ্ন উঠেছে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের উদ্দেশে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন। বুধবার গণভবনে ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করতে গেলে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা কেউ এমন কোনো কাজের সাথে যুক্ত হবে না, যা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে। মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসকে তোমাদের মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তোমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই আমরা তোমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। যদি তোমরা সেই মর্যাদা ধরে রাখতে না পার তাহলে তোমাদের কোনো দরকার নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী অনেক আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। শোভন-রাব্বানী দায়িত্ব পাওয়ার পরই ক্ষমতা দেখানো শুরু করেন। তারা অনেক সিনিয়র নেতাকে দেখেও না দেখার ভান করেন। শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকসেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও ওঠে। দলীয়প্রধান একাধিকবার সতর্ক করলেও তারা আমলে নেয়নি। শেষমেশ তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ইতোমধ্যে শোভন-রাব্বানীকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকসেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অপসারণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। দায়িত্ব পেয়েই দলীয় প্রধানের আস্থা অর্জনই তাদের মূল লক্ষ্য। আর এই আস্থা অর্জন করতে হলে প্রথমত, সংগঠনের ভাবমূর্তি যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেখান থেকে বের করে আনার চ্যালেঞ্জের চাপ নিতে হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, বিতর্কিত ও অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আগামী ১১ মাসের মধ্যে সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলা কমিটির সম্মেলন করে সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সফল হলে সামনের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের হারানো ঐতিহ্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা স্পষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় সংগঠনটিকে এগিয়ে নেবে নতুন নেতৃত্ব- এমন প্রত্যাশা সবার। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরই আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন, যত চ্যালেঞ্জই আসুক, ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর দেখানো নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে। যে ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে ছাত্রলীগ, তা কাটিয়ে উঠবে। হাতে ১১ মাসের মতো যে সময় আছে, সেই সময়ের মধ্যে দেশের সব কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। তিনি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন। ছাত্রলীগের বর্তমান চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি নয়া দিগন্তকে বলেন, যে অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অপসারিত হয়েছেÑ এটা নজিরবিহীন। প্রথমত, আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি প্রশ্রয় না দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং নতুন দুইজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদেরও স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, গত ১১ বছর রাজনীতির যে ধারা চলে আসছে তাতে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। নিজেরাও ভালো থাকতে চাইলে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে ভালো থাকতে পারবে কি না সেটা দেখার বিষয়। মনে করেন, তারা নিজেরা ২০ ভাগ ভালো থাকল। আর মন্ত্রী-এমপি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সংগঠনের বড় ভাইসহ এরকম অনেকগুলো পক্ষ আছে যাদের ওপর নির্ভর করছে বাকি ৮০ ভাগ। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন ভালো থাকাটা তাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং।