বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

বরিশাল ও খুলনার সিটি নির্বাচন জয়েও স্বস্তি নেই আ’লীগে

বরিশাল ও খুলনার সিটি নির্বাচন জয়েও স্বস্তি নেই আ’লীগে

  • মনিরুল ইসলাম রোহান

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে রাজনীতির মাঠে একেবারেই অপরিচিত এক স্বতন্ত্র নারী প্রার্থীর কাছে হেরে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে গেল খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে বড় জয়ে। দুই সিটি নির্বাচনে বড় জয়ে খুশি হলেও বরিশালে প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর ঠোঁট ও নাক ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা, ফলাফল প্রত্যাখ্যান ও সামনের দুই সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে বরিশালের নির্বাচনে প্রার্থীর ওপর হামলা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো সমালোচনা ও উত্তপ্ত করে তুলেছে রাজনৈতিক মাঠ ও সুশীল সমাজে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী পরিবেশ ও ভোটারদের অংশগ্রহণ নিয়ে বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল ও তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রচারণা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল সরকারি দলের নেতারা। কিন্তু গেল সোমবার নির্বাচনের দিন বরিশালের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমকে নাক ঠোঁট ফাটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যানসহ সামনের সিলেট সিটি নির্বাচন ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হারলেও ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। সুষ্ঠু ভোটের বিষয়সহ এই নির্বাচনের ইতিবাচক দিকগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহজে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী এবং দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব। ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপকভাবে ঢামাডোল পিটিয়ে ছিল সরকারি দলের লোকজন। কিন্তু বরিশালের বিতর্কিত ঘটনায় সেটা মিলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যাতে নির্বাচন বর্জন না করে সেটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক ওই দলটিকে নির্বাচন বর্জন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য শীর্ষ নেতাদের কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এ বিষয়টি নিয়েও দলের মধ্যে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কিভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে নীতিনির্ধারণী মহল।

জানা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের বেশ চাপ রয়েছে। ফলে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অন্যান্য দলের অংশগ্রহণে সরকারকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে হচ্ছে। এছাড়াও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না- বিএনপির এ অভিযোগকেও খন্ডাতে সিটি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার তাগিদ অনুভব করছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইসলামী আন্দোলন দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনেই বিজয়ীরা তাদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ ভোট পেয়েছে। এতে তারা বুঝতে পেরেছে যে আগামী নির্বাচনেও তাদের কোনো ভরসা নাই। এ জন্য আগেভাগেই পাততাড়ি গুটিয়ে পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই হয়তো তারা সেই ঘোষণা দিয়েছে। বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীকে ঘুষি মারার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যে বা যারাই এটি করেছে সেটি নির্বাচন কমিশন তদন্ত করছে, প্রশাসন তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচন মানেই চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বরিশাল ও সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাদের মেয়র প্রার্থীরা জিতেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে সরকারের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে খুলনা ও বরিশালের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট সেটা প্রমাণ করেছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণ প্রমাণ করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যায়। এ জয়ের ধারা সামনের নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে, ইনশা আল্লাহ।

দুই সিটি নির্বাচনের বড় জয় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নের ধারা সেই ধারা মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। যারফলে মানুষ নৌকার কোনো বিকল্প দেখছে না। বরিশাল ও খুলনার নির্বাচনে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা বরিশালের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের জয়ী করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে আফজাল হোসেন বলেন, আসলে বিভিন্ন বষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষমেষ সেই কোন্দল আর থাকে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। আর নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে বলেই দুই সিটিতেই আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877