বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত, সাংবাদিকরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে : জাতিসঙ্ঘ ও গণমাধ্যম

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত, সাংবাদিকরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে : জাতিসঙ্ঘ ও গণমাধ্যম

স্বদেশ ডেস্ক:

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিশ্বের প্রতিটি কর্নারে আক্রমণের মধ্যে রয়েছে। সাংবাদিকদের ক্রমাগত হয়রানি, কারাগারে পাঠানো এবং হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা এবং মিডিয়া আউটলেটগুলো মঙ্গলবার সতর্ক করে একথা জানিয়েছে।

বুধবার বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবসের আগে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক এবং মিডিয়ার জন্য সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘আমাদের সমস্ত স্বাধীনতা নির্ভর করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি এক ভিডিও বার্তায় এটিকে ‘গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি’ এবং ‘মানবাধিকারের প্রাণশক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।

নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে আয়োজিত এক সম্মেলনে গুতেরেস আরো বলেন, ‘তবে বিশ্বের প্রতিটি কোণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আক্রমণের মুখে রয়েছে।’

সমস্যাটি তুলে ধরে ইউনেস্কো তার ২০২৩ সালের বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার প্রদান করেছে তিন ইরানি নারী, দুই সাংবাদিক এবং একজন মানবাধিকার কর্মীকে। যারা এখনো কারাগারে বন্দী।

যদিও গুতেরেস সুনির্দিষ্ট কোনো দেশগুলোর ওপর দোষারোপ করেননি, অন্য বক্তারা স্বতন্ত্র কেসগুলো হাইলাইট করেছেন। যেমন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টার ইভান গারশকোভিচ রাশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক। তিনি এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশক আলমার লাটোর ফোরামে বলেছেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লড়াই হচ্ছে, ইভানের মুক্তির লড়াই, প্রত্যেকের স্বাধীনতার লড়াই।’

যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইভানের কারাবাসকে ‘সম্পূর্ণ অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছেন, তখন কয়েক ডজন সংবাদ সংস্থা গার্শকোভিচের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নিন্দা করেছে।
অন্য সাংবাদিকরা বলেছেন, পেশার ওপর ক্রমবর্ধমান বিপদের আঘাত বাড়ছে।

প্রবাসে বসবাসরত ইরান-আমেরিকান সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ বলেছেন, ‘আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, যেখানে সাংবাদিক হওয়া একটি অপরাধ। আপনাকে কারাগারে পাঠাতে পারে, আপনাকে হত্যা করতে পারে, আপনাকে নির্যাতন করতে পারে।’

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতে, ২০২২ সালে দায়িত্ব পালনকালে ৫৫ জন সাংবাদিক ও চারজন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।

গুতেরেস বলেছেন, ‘সত্যকে বিভ্রান্তি এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের দ্বারা হুমকি দেয়া হচ্ছে, যা ফ্যাক্ট এবং কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান এবং ষড়যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা অস্পষ্ট করতে চাইছে।’

তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদেরকে ‘নিয়মিতভাবে হয়রানি করা হয়, ভয় দেখানো হয়, আটক করা হয় এবং কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়।’

এই উপলক্ষে ইউনেস্কোর প্রধানের সাথে বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্টানে অন্যরা একই ধরনের কথা বলেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অড্রে আজৌলে বলেন, ডিজিটাল যুগ পুরো তথ্যের ল্যান্ডস্কেপকে বদলে দিচ্ছে- ‘পেশাদার, মুক্ত, স্বাধীন সাংবাদিকতা’কে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় করে তুলছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানো অগ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নতুন মোড়ে নিজেদের খুঁজে পাই। আমাদের বর্তমান পথ আমাদেরকে সচেতন পাবলিক বিতর্ক থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। আরো মেরুকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশক এজি সুলজবার্গার বলেছেন, এটি শুধুমাত্র সরাসরি দমন-পীড়ন নয়, যা সাংবাদিকদের এবং তথ্যের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট ভুল তথ্য, প্রোপাগান্ডা, পন্ডিট্রি এবং ক্লিকবাইটের তুষারপাতকেও মুক্ত করেছে যা এখন আমাদের তথ্য বাস্তুতন্ত্রকে আচ্ছন্ন করে। সামাজিক বিশ্বাসের পতনকে ত্বরান্বিত করে।’

তিনি বলেছেন, ‘যখন মুক্ত সংবাদ ক্ষয় হয়, তখন গণতান্ত্রিক ক্ষয় প্রায় সব সময় তাকে অনুসরণ করে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, সেন্সরশিপ আরো সাধারণ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে সেন্সরশিপ তাদের সমাজের জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক সরকারের ত্রুটি থাকে।’

ইউনেস্কো পুরস্কারের প্রাপ্ত ছিলেন ইরানী সাংবাদিক এলাহেহ মোহাম্মদী এবং নিলোফার হামেদি। তারা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাহসা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশে সহায়তা করেছিলেন।

সূত্র : বাসস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877