শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

পাঁচ বছরের লক্ষ্য ১০ বছরেও অনেক দূর

পাঁচ বছরের লক্ষ্য ১০ বছরেও অনেক দূর

স্বদেশ ডেস্খ:

আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ৫ বছরের মধ্যে (২০১৪ সালে) বাংলাদেশ নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য গত ১০ বছরেও পূরণ হয়নি; বরং লক্ষ্যটি এখনো অনেক দূরে। দেশে এখনো ২৬.১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। আর অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ৭৩.৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরক্ষরতামুক্ত দেশ করার অঙ্গীকার ছিল রাজনৈতিক, বাস্তবভিত্তিক ছিল না। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় থাকলেও ইশতেহার অনুযায়ী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে রোডম্যাপ করেনি সরকার। সেই অনুযায়ী বরাদ্দও দেওয়া হয়নি এ সময়ের বাজেটগুলোয়। ফলশ্রুতিতে এখনো দেশে নিরক্ষর সোয়া তিন কোটি জনগোষ্ঠী।

বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিরক্ষর রেখে প্রতিবছর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এই দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ সব অঙ্গীকার। বাস্তবায়নে নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আজ রবিবার উদ্যাপন করা হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বহু ভাষায় সাক্ষরতা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা’।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, তাতে শিক্ষা ও বিজ্ঞান অনুচ্ছেদে বলা হয়Ñ ‘২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশ। লক্ষ্য পূরণ কেন হয়নি জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ২০০৮ সালের ঘোষণাটি ছিল রাজনৈতিক। বাস্তব প্রয়োগের চেয়ে অনেক দূরে। একটি বিষয়ে যখন অঙ্গীকার করা হয়, তার বাস্তবায়ন কৌশলও নির্ধারণ করতে হয়। সেটা হয়নি বলেই ২০১৯ সালেও আমরা নিরক্ষরমুক্ত হতে পারিনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- শিক্ষায় ব্যয় বাড়ানো হয়নি। আমরা নিরক্ষরতামুক্ত করার কথা বলছি, সেই অনুযায়ী শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষা; এখানে ছোটখাটো প্রকল্প দিয়ে সমাধান হবে না। প্রকল্প শেষ তো কার্যক্রম শেষ। তা হলে যারা নিরক্ষর থাকল, তাদের বিষয়টি বাদ পড়ে গেল। স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করতে হবে নীতিনির্ধারকদের।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি লোককে নিরক্ষরমুক্ত করা হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত করার লক্ষ্য সরকারের।

কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষা গবেষক খায়রুল আলম মনির বলেন, সাক্ষরতা একটি দেশের উন্নয়নের অতি আবশ্যক শর্ত। পৃথিবীতে এমন একটি দেশও নেই যে শতভাগ সাক্ষর হয়েও গরিব। প্রতিটি দেশই আগে শতভাগ বা তার কাছাকাছি সাক্ষর হয়েছে, তার পর উন্নতি করেছে। আর আমাদের নীতিনির্ধারকরা আগে উন্নতি করে পরে দেশকে সাক্ষরতা দিতে চাইছেন, যাকে বলে উল্টোযাত্রা। তিনি বলেন, ২৬.১ শতাংশ মানুষকে নিরক্ষর রেখে কি কোনো দেশ সামনে এগোতে পারে? সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করার কথা বলছে। কিন্তু সেটি কি বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিরক্ষর রেখে সম্ভব? সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য গণশিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিগত সময়ে। হরেক রকম গণশিক্ষা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি আছে বেসরকারি উদ্যোগও। কিন্তু কোনোটাই আমরা ভালোভাবে করতে পারিনি।

সাক্ষরতা দিবসের কর্মসূচিতে আজ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আলোচনাসভা রয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877