সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ডলার সঙ্কটে এলসির দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

ডলার সঙ্কটে এলসির দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

স্বদেশ ডেস্ক:

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসির দায় মেটাতে ১০ কোটি ডলার চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কিন্তু এক ডলারও দেয়া হয়নি। অপর একটি ব্যাংক প্রায় ১৯ কোটি ডলার চেয়েছিল। এর বিপরীতে দেয়া হয়েছে মাত্র এক কোটি ডলার। আরো একটি ব্যাংক ১০ কোটি করে ডলার চেয়েছিল। বিপরীতে তাদের দেয়া হয়েছে ২.১ কোটি ডলার। আরেকটি ব্যাংক চেয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি ডলার, বিপরীতে দেয়া হয়েছে ১.৩ কোটি ডলার। এভাবেই ডলার সঙ্কটের মুখে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানির জন্য এলসির দায় পরিশোধে বেকায়দায় পড়ে গেছে।

জানা গেছে, সরকারের সার, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির বেশির ভাগই হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাধ্যমে। ডলার সঙ্কটে অতি প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের আমদানি দায় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং নির্ভরতা কমিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডিরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই এমডিদের এমন বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন দেশে ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশেই অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা হয়। কিন্তু এলসির দায় পরিশোধে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো- চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সংস্থান করতে তারা পারছেন না। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান হচ্ছে চাহিদা তার চেয়ে আরও অনেক বেশি। আবার রেমিট্যান্সও কাক্সিক্ষত হারে আসছে না।

অগ্রণী ব্যাংক ছাড়া বাকি তিনটি ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণ কমে গেছে। এ বিষয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) পক্ষ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ১০৭ টাকা। এ দর বেশির ভাগ ব্যাংকই মানছে না। যেমন অগ্রণী ব্যাংক রেমিট্যান্সের জন্য প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় করছে ১১১ টাকা। এভাবে অনেক ব্যাংকই বাফেদার সিদ্ধান্ত মানছে না রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে। অনেক ব্যাংক ১১২ টাকা থেকে ১১৪ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে প্রতি ডলারে। সমস্যায় পড়ছে, যারা বাফেদার সিদ্ধান্ত মানছে। কারণ বাফেদার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার ১০৭ টাকার বেশি দেয়া যাবে না। যে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিচ্ছে বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ওই ব্যাংকের মাধ্যমেই রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এভাবে যারা নিয়ম মানছে তাদের রেমিট্যান্স আহরণ কমে গেছে। আর এ কারণেই সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক তাদের রেমিট্যান্স আহরণের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। এ বিষয়ে বাফেদার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খুলে বেকায়দায় পড়ে গেছে। গতকাল এমনি একটি সরকারি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সরকারি পণ্য আমদানির দায় সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। এমনো এলসির দায় রয়েছে যা ৫ থেকে ৬ বার পরিশোধের সময় (ডেফার্ড) পেছানো হয়েছে। এতে ব্যাংকের শুধু সুনামই ক্ষুণœ হচ্ছে না, জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর আগের মতো ডলার সরবরাহ করছে না। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাক্সিক্ষত হারে ডলার সরবরাহ করছে না। অথচ চাহিদা অনুযায়ী ডলার কেনার জন্য প্রতিদিনই ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা আলাদা করে রাখতে হয়। দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করে না। অথচ এ অর্থ কলমানি মার্কেটে খাটালেও কিছু মুনাফা আসতো। এভাবে নানাভাবে তারা লোকসান গুনছে। সংশ্লিষ্ট আরেক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রায় ১৯ কোটি ডলার চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরবরাহ করেছে মাত্র এক কোটি ডলার। আরো দু’টি ব্যাংক ১০ কোটি করে ২০ কোটি ডলার চেয়েছিল। কিন্তু একটি ব্যাংককে এক ডলারও দেয়া হয়নি। অপর একটি ব্যাংককে দেয়া হয়েছে মাত্র ২.১ কোটি ডলার। এভাবেই প্রতিদিনই তারা এলসির দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ ইতোমধ্যে কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে গতকাল সোমবার পর্যন্ত রেকর্ড ডলার বিক্রি করেছে রিজার্ভ থেকে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১০.১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। অথচ গত পুরো অর্থবছরে যা ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি বাড়িয়ে দিলে রিজার্ভ আরো কমে যাবে। ওই সূত্র জানিয়েছে, গত দুই মাসের আকুর দায় প্রায় ১.০১ বিলিয়ন ডলার গতকাল পরিশোধ করার ওপর চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। যা আজ সমন্বয় হয়ে যাবে। আর এটা হলে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাবে। আর আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী তা নেমে যাবে ২৩ বিলিয়ন ডলার। এমনিতেই রিজার্ভ চাপে পড়ে গেছে। এই অবস্থায় ঢালাওভাবে ডলার বিক্রি করলে রিজার্ভ আরো কমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডিদের সাথে গভর্নরের বৈঠকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। তা না করে এভাবে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নামবে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। সঙ্কট মেটাতে আমদানি ব্যয় কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হুন্ডি তৎপরতা কমিয়ে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে। আইএমএফ থেকে এরই মধ্যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া গেছে। আরো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা চলছে। এভাবে রিজার্ভের অস্বস্তিদায়ক অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877