রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০১:০৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ব্যাংকগুলোর সংকট আরও বাড়বে

ব্যাংকগুলোর সংকট আরও বাড়বে

স্বদেশ ডেস্ক: বর্তমানে ব্যাংক খাত বড় ধরনের অর্থ সংকটে রয়েছে। নগদ তারল্য ক্রমেই কমছে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পেতে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের অনুরোধে নীতিমালা সংশোধন করা হয়। তার পরও অর্থ সংকট কমেনি। এরই মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনের অতিরিক্ত অর্থ কোষাগারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সংস্থাগুলোর প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা আছে। এ অর্থ তুলে নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হলে ব্যাংক খাতের সমপরিমাণ আমানত কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯’ খসড়া অনুমোদন হয়। এ আইনের ফলে স্বশাসিত সংস্থাগুলোর পরিচালন ব্যয়ের অর্থ তাদের নিজস্ব তহবিলে থাকবে। তারপর আপৎকালীন ব্যয়ের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থও রাখা যাবে। বাকি উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নেওয়া হবে। মোট ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির কাছে বেশি জমা রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে জমা আছে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে জমা

রয়েছে চার হাজার ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৪২৫ কোটি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা রয়েছে। এসব অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা রয়েছে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে ঋণের সুদহার কমানোর কথা বলে আসছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকরের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না এমন দাবি করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালকরা কয়েকটি সুবিধা হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে একটি সুবিধা ছিল সরকারি সংস্থার ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখা। অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি মোতাবেক সরকারি সংস্থার আমানতের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নীতিমালা জারি করে। সেটি কার্যকর হলেও সুদহার কমেনি বরং এখন বাড়ছে। নতুন আইন হলে ব্যাংক থেকে আমানত সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ফলে অর্থ সংকট কাটাতে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করবে ব্যাংকগুলো। এতে ঋণের সুদহারও বেড়ে যাবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব ব্যাংকে সরকারি সংস্থাগুলোর অনেক অর্থ রয়েছে সেসব ব্যাংক সাময়িক সংকটে পড়বে। তাদের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) লঙ্ঘন হতে পারে। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনা ভালো হলে মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে এ সংকট থাকবে না। তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। এখন সরকারি সংস্থাগুলোর আমানত সরকারি কোষাগারে জমা হলে তার সাময়িক প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে। এ প্রভাব কাটানো সম্ভব যদি সরকার এ অর্থ ভালোভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহার করে। অর্থ ব্যবস্থাপনা ভালো হলে সংকটের আশঙ্কা কম। তিনি আরও বলেন, সরকারের অনেক সংস্থা নিজেরা বিনিয়োগ করে। অর্থ নেওয়ার সময় সরকারকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তাদের বিনিয়োগ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নিচ্ছে। আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে, যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে সেটি না হলে ওই টাকা ব্যাংকেই যেত। গত অর্থবছর সর্বমোট ৯০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। তা আগের বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পরিশোধের পর নিট বিক্রি দাঁড়ায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। নিট হয়েছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এক মাস ২৫ দিনে (১ জুলাই থেকে ২৫ আগস্ট) সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার মতো অর্থ থাকবে না। তাদের ঋণের সক্ষমতাও কমে যাবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যাংকে এ অর্থ আমানত হিসেবে জমা রয়েছে। এতে অবশ্যই ব্যাংকে প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি চলছে। অনেক ব্যাংক অর্থের অভাবে ঋণ দিতে পারছে না। এখন সরকার যদি একবারে এ অর্থ তুলে নেয় তা হলে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা অনেক ব্যাংকের লঙ্ঘন হয়ে যাবে। তারল্য ব্যবস্থাপনা ম্যানেজ করা ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা সরকারের কাছে ব্যাংকের বিষয়টি তুলে ধরব। ব্যাংকের জন্য সংকট তৈরি হবে সরকার নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্ত নেবে না।

এবিবির সাবেক সভাপতি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সবাইকে মানতে হবে। তবে সরকারি অর্থ নিয়ে কোথায় রাখে সেটি দেখতে হবে। যদি সোনালী ব্যাংকের রাখে তা হলে ব্যাংকিং খাতে থাকবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রাখলে ভিন্ন কথা। তবে সরকারি অর্থ খরচ করলে সেটি এক সময় ব্যাংকেই ফেরত আসবে। এখন দেখার বিষয় সরকার কোথায় টাকা রাখে। এর পর বোঝা যাবে ব্যাংক খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877