নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার ‘সরকারের ভিত নাই’ বলে করা মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় রেড ক্রিসেন্ট মাঠে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সমালোচনা করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইয়ের একটা বক্তব্য পত্রিকায় পড়লাম, টেলিভিশনে শুনলাম- সরকারের নাকি একদম ভিত নাই। সরকারের ভিত আছে বিধায়ই পরপর চারবার আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তারা তো টেনে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু টান দিতে গিয়ে তারাই ধপাস করে পড়ে গেছে। এখন কোমর যে ভেঙে গেছে, সে অবস্থা থেকে তারা আস্তে আস্তে একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আর গত বছর ২৮ অক্টোবর তাদের কার আগে কে দৌড় দেয় সেই প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি নয়াপল্টনের সামনে।’
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্না ভাইসহ আরও কিছু ব্যক্তিবিশেষ আছে, যাদের নিজের দলের ভিত্তি নেই, ঘুরে ঘুরে দল করে। মান্না ভাই মাশাআল্লাহ এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি দল বদল করেছেন। কিছুদিন জাসদ, তারপর বাসদ, বাসদ ভেঙে এখন গণতন্ত্র মঞ্চ। সেটি ভেঙে কখন আবার পালিয়ে যান, বলা যায় না। রাজনীতিতে তারা পরিত্যক্ত ব্যক্তিবিশেষ। এদের কথার কোনো মূল্য নেই।’
তিনি বলেন, ‘তাদের দল ছোট, তারা যখন সমাবেশ করে তাদের মানুষ থাকে ২০ থেকে ৩০ জন, সাংবাদিক থাকে ৫০ জন। এই নিয়ে তাদের সমাবেশ হয়, কিন্তু গলা অনেক বড়। শুধু তাই নয়, এদের একজন (গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি) ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোটে দাঁড়িয়েছিল, প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার পূর্ণ করতে পারে নাই, কিন্তু আওয়াজ অনেক বড়। আবার টেলিভিশনে দেখা যায় ভলিউমও তাদের একটু বড় থাকে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সমগ্র পৃথিবী আজকে সেটির প্রশংসা করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, জার্মান চ্যান্সেলর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টসহ সমগ্র পৃথিবী বালাদেশের প্রশংসা করে, কিন্তু বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা এটির প্রশংসা করতে পারে না। আমাদের রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যান আর সংঘাতের সংস্কৃতি না থাকলে দেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে পারত।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের পর ৮০টা দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে বলেছেন, আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। এতে ব্যক্তি বিশেষ রাজনীতির ব্যাঙদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এজন্য তারা ব্যাঙের মত বেশি বেশি লাফাচ্ছে।’
বিশ্ব রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট দিবস নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশ বিনির্মাণে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতের পথচলায় আমাদের দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবসেবা অনেক অবদান রাখবে।’
স্কুলজীবনে নিজেও জুনিয়র রেড ক্রিসেন্ট সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জীবনে বহুপথ পাড়ি দিয়ে বহু প্রবিন্ধকতাকে ডিঙ্গিয়ে আজকের এই পর্যায়ে আসার ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউটিং আমার জীবনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।’
দেশে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় যে সরকারি হাসপাতালে সরকার মেশিন কিনে দিয়েছে কিন্তু সেই মেশিনের বাক্স খোলা হয় না। আবার মেশিন খোলা হয় ঠিকই, কয়েক দিন পরে নষ্ট হয়ে যায়, মেরামতের আর উদ্যোগ নেওয়া হয় না, যাতে করে মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো যারা করেন, তারা আসলে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ান, জনগণের বিপক্ষে কাজ করেন এবং স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে এবং সহজ-সুলভে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো বড় অন্তরায়।
তিনি বলেন, ‘যখন জনগণ সোচ্চার হবে তখন এগুলো করা আর সম্ভবপর হবে না। সরকার কোনো যন্ত্র নয়, সরকারও মানুষ দিয়েই চলে। সুতরাং জনগণ যখন এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলবে সরকারের পক্ষেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজতর হবে।’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক, বিডিআরসিএস ব্যবস্থাপনা পরিষদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংবর্ধেয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবির চৌধুরী। জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার আসলাম খান এতে স্বাগত বক্তব্য দেন।