শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

ধনীদের হাতে ৭০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র

ধনীদের হাতে ৭০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র

স্বদেশ ডেস্ক;

নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ দিচ্ছে সরকার। জনগণের করের টাকায় দেয়া এই সুদের বেশির ভাগই খাচ্ছে উচ্চবিত্ত ও ধনীরা। কেননা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশই ধনী। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। পিআরআই বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি টার্গেট পূরণ করতে বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাথে সরকারকে আরো অতিরিক্ত ৮০০ কোটি থেকে এক হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগান দিতে হবে।

পিআরআইর কার্যালয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ নিয়ে আয়োজিত গতকাল এক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. এম আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ড. জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকারও বক্তব্য রাখেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এম এস রাশিদুল ইসলামও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণায় বলা হয়, অষ্টম-পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে ২০২২ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে। এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সরকারকে প্রতি বছর জিডিপির সাথে আরো অতিরিক্ত ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই বিশাল অঙ্কের অর্থ কোন খাত থেকে আসবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই সরকারের। ফলে এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেট আরো বাড়াতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বড় লোকদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না। তা ছাড়া যত দিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার থাকবে তত দিন দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নতি হবে না। এ জন্য উচ্চ হারে সুদ দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত না বলে অভিমত দিচ্ছে অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তারাই মূলত সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমাতে দেয় না।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয় তার ৭০ শতাংশের বেশি ধনীদের। ফলে সরকার যে উচ্চ সুদ দিচ্ছে সেই অর্থ যাচ্ছে সরকারি আমলা ও উচ্চ ধনী ব্যক্তিদের পকেটে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের কারণেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের একটা গবেষণায় দেখেছি ৭০ শতাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র কিনেন ধনীরা। যত দিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার থাকবে তত দিন বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করবে না। কর-জিডিপির হার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি, কর-জিডিপির রেশিও দিন দিন কমছে। আগামীতে আরো কমবে। কর-জিডিপির রেশিও ১২ শতাংশ থেকে কম সাড়ে ৭ শতাংশ হয়ে গেছে।

ড. এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার যে রাজস্ব আয় করে তার ২০ শতাংশই সুদ পরিশোধের জন্য ব্যয় করতে হয়। সরকারের এই সুদ ব্যয় কমাতে হলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে হবে। উচ্চ হারে সুদে দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া উচিত না। সঞ্চয়পত্র দিয়ে বড় লোকদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের বদলে অন্য জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। ড. রাজ্জাক বলেন, ইউনিসেফের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা খাতে তার মোট জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই খাতেই বরাদ্দের হার ১ শতাংশ। এটা বাড়াতে হবে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মতে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে ৫ শতাংশ। আমাদের দেশে বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। মানদণ্ড অনুযায়ী খুবই নগণ্য। এ ছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই কম। যাও দেয়া হচ্ছে সেখানে রয়েছে অনিয়ম ও বৈষম্য। এই বরাদ্দ বাড়াতে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কর আহরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ হারে এটা ন্যূনতম ২০ শতাংশে উন্নিত করতে হবে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির অটোমেশনের কারণে আগামীতে কম কর্মী দিয়ে বেশি উৎপাদন হবে। ফলে উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান কমে যাবে, তাই আমাদের বিশাল পরিমাণ এই কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সেবা খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রধান খাত হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কর্মী বাড়াতে পারলে এক দিকে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্ভব হবে। অন্য দিকে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতি হবে পাশাপাশি মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে এম এ রাজ্জাক বলেন, আমাদের বাজেটের আকার মূলত জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদনের) ১৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ সরকার ব্যয় করে ১৩ শতাংশের মতো। অথচ পৃথিবীর গরিব দেশগুলোতেও গড়ে জিডিপির ২৪-২৫ শতাংশ ব্যয় করে সরকার। সরকারের ব্যয় বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়তে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877