রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

বাড়ছে বিদ্যুতের দাম : ঘোষণা আজ

বাড়ছে বিদ্যুতের দাম : ঘোষণা আজ

স্বদেশ ডেস্ক:

মাস দুই আগে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫১ শতাংশের ওপরে বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নানা সমালোচনার মুখে ৫ শতাংশ কমানো হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আজ। অথচ দেড় মাস আগে পাইকারি দর বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ১ মাস ৮ দিনের মাথায় বিইআরসি সিদ্ধান্ত বদল করেছে কমিশন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থাৎ আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পরিপালন করতেই মূলত দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় গ্রাহকপর্যায়ে আপাতত কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে তাদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন করবে। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

বিইআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তিনটি কারণে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গত অক্টোবরে বাতিল করা হয়েছিল। পিডিবি ব্যাখ্যাসহ রিভিউয়ের আবেদন করেছে। কমিশন বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্তে এসেছে। আজ সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেবে বিইআরসি।

আগামী সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে আইএমের কাছ থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে ঋণ পাওয়ার অন্যতম একটি শর্ত পরিপালন হবে। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়লে গ্রাহকপর্যায়েও দাম বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। বেড়ে গেছে ডলারের দাম। সব মিলে এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা, এর ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়লে পণ্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে যাবে। এতে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পিডিবির ৬৫.৫৭ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৮ মে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। নিয়ম অনুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির রায় ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ১৩ অক্টোবরের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করেছিল বিইআরসি। কিন্তু এর ১ মাস ৮ দিনের মাথায় বিইআরসি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। আজ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

বিইআরসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিশন ১৫-২৫ শতাংশের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রেখেছে। এরই মধ্যে তা বিদ্যুৎ বিভাগে জমাও দেয়া হয়েছে। সরকার চাইলে এটি কিছুটা বাড়াতে বা কমাতেও পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে তার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হার।
বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ইউনিটপ্রতি ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে আট টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল পিডিবি। তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ব্যয়বহুল বলে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, একই কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ। এখনতো বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত। পাইকারি দাম বৃদ্ধিকে কোম্পানিগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

সাধারণত সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দামের সাথে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব কমে গেছে। পাইকারি দাম বৃদ্ধি পেলে সেই সুযোগে কম উৎপাদনকে সামনে এনে বেশি করে দাম বৃদ্ধির চাইবে, যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। ফলে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় থাকবে না বলে তারা মনে করছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877