স্বদেশ ডেস্ক:
আমরা প্রায় সবাই প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করি। কিন্তু অনেকেই সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করি না। ফলে দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। উপরন্তু দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দাঁত ব্রাশ করতে ব্যবহার করতে হবে সঠিক টুথব্রাশ। বাজারে যদিও নরম, মাঝারি-নরম ও নরম তন্তুবিশিষ্ট ব্রাশ পাওয়া যায়, তবু নরম ব্রাশই বেশি নিরাপদ। শক্ত ব্রাশ মাড়িতে ক্ষত তৈরি করতে পারে। দাঁতের অ্যানামেল নামক বাইরের আবরণ ক্ষয় করে ফেলতে পারে। ফলে দাঁত হয়ে পড়তে পারে সংবেশনশীল। টুথব্রাশের মাথা, যেখানে তন্তু বসানো থাকে, তা ছোট হলে ভালো হয়। এতে ব্রাশের মাথা দাঁতের সব অংশে ঠিকভাবে পৌঁছতে পারে।
আরেকটি দরকারি বিষয় হলো- একটি ব্রাশ তিন মাসের বেশি ব্যবহার না করা। কারণ ব্রাশ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তন্তুগুলো বাঁকা হয়ে কর্মক্ষমতা হারাতে পারে। বেশি সময় ধরে ব্রাশ করা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। দুই থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত ব্রাশ করা ভালো। দাঁত ব্রাশ করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশে দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না, বরং দাঁত ও মাড়ির ক্ষতির কারণ ঘটাতে পারে। দন্তচিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ে দাঁত মাজার অনেকগুলো পদ্ধতির কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন- রোল পদ্ধতি, বেজ পদ্ধতি, স্টিলম্যান পদ্ধতি, চার্টার পদ্ধতি ইত্যাদি। এতসব পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রোল পদ্ধতি সবচেয়ে সোজা। এ পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশের জন্য আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (এডিএ) সমর্থনও দিয়েছে। এ পদ্ধতির নাম এডিএ।
রোল পদ্ধতিতে দাঁত মাজতে হলে ব্রাশটি দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলের একটু ওপরে মাড়িতে ৪৫ ডিগ্রি কোণা করে রাখুন। এরপর ব্রাশটি মাড়ি থেকে দাঁতের দিকে টানুন। এভাবে উপর-নিচের সব দাঁত ক্রমাগত ব্রাশ করুন। মুখগহ্বরের পেছনের দিকের মোলার দাঁতের উপরিতল পরিষ্কার করতে দাঁতের উপরিতলে ব্রাশ রাখুন। তারপর সামনে-পেছন করে ব্রাশ করুন। সামনের দাঁতের ভেতরের অংশ পরিষ্কারের জন্য সেখানে উল্লম্বভাবে ব্রাশ রাখুন। তারপর উপর-নিচ করে ব্রাশ চালিয়ে যান।
মনে রাখতে হবে, দাঁত পরিষ্কারের পাশাপাশি জিহ্বাও ব্রাশ করা উচিত। কারণ এর উপরিভাগে সহজেই জীবাণু জন্ম নিতে পারে। তাই জিহ্বার পেছনের দিকে ব্রাশ রেখে তা পেছন থেকে সামনের দিকে টেনে জিহ্বা পরিষ্কার করুন। এতে জিহ্বা জীবাণুমুক্ত থাকবে, মুখগহ্বর থাকবে সতেজ। দাঁত ব্রাশ করার পর ব্রাশটি পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। নইলে ব্রাশে জীবাণু বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে আবার দাঁত ব্রাশের সময় অপরিষ্কার ব্রাশ থেকে জীবাণু মুখে প্রবেশ করতে পারে। ব্রাশ ধুয়ে তা শুকনো জায়গায় রেখে দিন, যেন তা সহজে শুকিয়ে যেতে পারে। কারণ ভেজা ব্রাশে সহজেই জীবাণু জন্মাতে পারে। দাঁত মাজার সময় ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। কারণ দাঁতের ক্ষয় রোধ ও দাঁত মজবুত রাখতে ফ্লোরাইড খুব উপকারী। দাঁত ব্রাশ করুন দিনে দুইবার- সকালে ও রাতে। দাঁত মাজার পাশাপাশি ‘ডেন্টাল ফ্লোস’ অর্থাৎ দাঁত পরিষ্কারের সুতা ব্যবহার অনেক উপকারী। দুই দাঁতের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান, যেখানে ব্রাশের তন্তু প্রবেশ করতে পারে না, সেই স্থান পরিষ্কারের জন্য ‘ডেন্টাল ফ্লোস’ বেশ কার্যকর। দাঁত ও মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখার জন্য মাউথওয়াশ দিয়েও কুলি করা যায়। তা করতে হলে আগে দাঁত ব্রাশ করে নিতে হবে। তারপর মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
লেখক : ডেন্টাল স্পেশালিস্ট