স্বদেশ ডেস্ক:
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম প্রিয়া সাহা। কিন্তু কে এই প্রিয়া সাহা? হুট করে কোথা থেকে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলেন তিনি? ক্ষমতাধর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে অভিযোগকারী এই নারীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে মিথ্যা অভিযোগকারী সেই প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস পিরোজপুরের মেয়ে। বাবার বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে, আর শ্বশুরবাড়ি যশোরে। তার বাবার নাম মৃত নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী প্রিয়া থাকতেন রোকেয়া হলে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গত বছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আট সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন। এই ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত।
এছাড়া ‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি এনজিওর পরিচালক প্রিয়া সাহা। সেইসঙ্গে তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ওই পত্রিকায় প্রিয়া সাহার পুরো নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রিয় বালা বিশ্বাস’। সেখানে বয়স দেখানো হয়েছে ৫৪ বছর।
প্রিয়ার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুদকের সদর দপ্তরে উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ১৯টি দেশের ২৭ জন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সাক্ষাৎকালে ট্রাম্পের কাছে নিজের দেশ সম্পর্কে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিযোগ করেন প্রিয়া।
তিনি ট্রাম্পকে বলেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বিলীন হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।’
ওই নারী আরও বলেন, ‘আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি, তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা (প্রশাসনবা সরকার) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এখন পর্যন্ত।’
এ সময় ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে?’ উত্তরে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদি গ্রুপ। তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সবসময়ই পায়।’
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ করেছেন তা তার নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজনের ভাষ্য, প্রিয়া তার ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমানকে হয়রানি করে আসছেন।