স্বদেশ ডেস্ক:
সরকারের অনমনীয় মনোভাব জানার পর পোশাকশিল্পের মালিকরা ঈদের আগে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটির নোটিশ দিয়েছেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, যদি লকডাউনকালে করোনা সংক্রমণ কমে আসতে থাকে তখন ১ আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা খোলার পক্ষে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
পোশাক কারখানাসহ সব শিল্প-কারখানা বন্ধ রেখেই বাংলাদেশে আগামীকাল ২৩ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কড়া লকডাউন শুরু হচ্ছে।
পোশাক মালিকরা নিরন্তর চেষ্টা করেছেন এই শিল্পকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা চিঠি লিখে খোলা রাখার আর্জি জানান। আর্জিতে তারা বলেন, গত রোজার ঈদে কাজের চাপ কম থাকায় ছুটিও কিছুটা শিথিল ছিল। এখন কাজ বেড়েছে। এসময় লম্বা ছুটির সুযোগ নেই। তাছাড়া, দীর্ঘদিন ছুটি থাকলে শ্রমিকরা উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যাবে। যেগুলো ইতিমধ্যেই করোনার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। ছুটি শেষে এই শ্রমিকরা যখন ফিরে আসবে তখন সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেড়ে যেতে পারে।
২০ দিন ছুটির পর কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে জুলাই মাসের বেতনের প্রশ্নটি আসবে। তাই লম্বা সময় ছুটি না দিয়ে রপ্তানিমুখী এই শিল্পকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন। সরকার সিদ্ধান্তে অনড়। আপাতত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। এতে মালিকরা হতাশ হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকরা বেজায় খুশি। তাদের কথা, গত দুটি ঈদে আমরা বাড়ি যেতে পারিনি। ৪০ লাখ শ্রমিক এই শিল্পে কাজ করেন।
সরকারের অনমনীয় মনোভাব জানার পর পোশাকশিল্পের মালিকরা ঈদের আগে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটির নোটিশ দিয়েছেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, যদি লকডাউনকালে করোনা সংক্রমণ কমে আসতে থাকে তখন ১ আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা খোলার পক্ষে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এ সম্পর্কে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের নির্দেশ মতোই আমরা ছুটি ঘোষণা করেছি। ফারুক হাসান অবশ্য এটাও বলেছেন, আগামী লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে এ খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আসার পর ক্রেতারা রফতানি আদেশ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বেশিরভাগ কারখানায় ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি দিয়ে ৬ আগস্ট কারখানা খোলার নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিছু কারখানায় ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় শ্রমিকদের জানানো হয়, সরকার যদি লকডাউন শিথিল করে তখন পয়লা আগস্ট থকে কারখানায় আবার কাজ শুরু হবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকরাও একই নোটিশ দিয়েছেন। তাদের তরফে শ্রমিকদের বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে মোবাইলফোনে সবাইকে অবহিত করা হবে।
উল্লেখ্য যে, করোনা সংক্রমণ চুড়ায় ওঠার পর সরকার বিধি-নিষেধ জারি করে। এসময় পোশাকশিল্পকে এর বাইরে রাখা হয়। সর্বশেষ করা লকডাউনের সময়ও পোশাকশিল্পকে একই সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৩ জুলাই মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ থেকে নতুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা -বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত সব ধরনের বিধি-নিষেধ শিথিল থাকবে।
এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দু’সপ্তাহ কঠোর লকডাউন শুরু হবে। বিজিএমইএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দুই হাজার ৩০০ কারখানা চালু রয়েছে। ১২০০ কারখানা স্বল্প পরিসরে চালু এবং বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা