স্বদেশ ডেস্ক:
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে সব ধরনের দুধের চাহিদা বাড়ে। করোনার প্রকোপে গত বছর এর ব্যতিক্রম ঘটলেও এ বছর দুধের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে বাজারে পণ্যটির দামও বেড়ে গেছে। রমজানের অনেক আগেই রাজধানীর বাজারে তরল দুধের দাম লিটারে ৫ টাকা ও গুঁড়াদুধের কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
রেস্টুরেন্ট, খাবার দোকান, বিয়ের অনুষ্ঠান ও অন্য খাবার তৈরিতে দুধের ব্যবহার সর্বত্র। এ ছাড়া রমজান মাস ঘিরে দুধের বাড়তি চাহিদা থাকে। কিন্তু গত বছর করোনার প্রকোপে দুধের চাহিদা কমে গিয়েছিল। এমনকি রমজান মাসেও দুধের চাহিদা অন্য বছরের তুলনায় কম ছিল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার পাস্তুরিত দুধের চাহিদা কমার আশঙ্কা নেই। বাজারে ইতোমধ্যেই দুধের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়তি রয়েছে। পাস্তুরিত দুধ বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বলছে, রমজানে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে বেশি পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে খামারি পর্যায়ে দুধের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শবেবরাতের আগেই চিনি ও দুধের দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে তরল দুধের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ায় পাস্তুরিত দুধ বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তারও আগে গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে। রাজধানীর মগবাজার দিলু
রোডের মাহবুব জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মাহবুব জানান, বর্তমানে মিল্কভিটাসহ অন্য তরল দুধ প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। শবেবরাতের আগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। আগে এক লিটারের প্যাকেট বিক্রি করেছি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। গুঁড়াদুধের দামও অনেক বাড়তি এখন।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল আমাদের সময়কে জানান, গত বছর করোনার প্রকোপে দুধের উৎপাদন কমে গিয়েছে। গো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াসহ খামার পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খামার পর্যায়ে দুধের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বাজারে তরল দুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানো হয়নি।
জানতে চাইলে মিল্ক ভিটা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমর চান বণিকও বলেন, গতবছর রামজানে চাহিদা কমে গেলেও এ বছর তা হয়নি। রমজানে প্রতিদিন গড়ে তিন লাখ লিটার দুধের চাহিদা রয়েছে। রমজানের অতিরিক্ত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাড়তি দুধ সংগ্রহ করছি। বর্তমানে প্রতিদিন এক লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করছি আমরা।
দুগ্ধ খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান হোসেন আমাদের সময়কে জানান, বাজারে পাস্তুরিত দুধের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ানো হয়েছে। দুগ্ধ খামারিরা দুধের দাম বাড়ায়নি। খামারিরা আগের দামেই কোম্পানিগুলোকে দুধ সরবরাহ করছে। ইমরান বলেন, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বাঘাবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুগ্ধ খামারিরা মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর কাছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছে। কোথাও কোথাও এর কমেও দুধ সরবরাহ করছে প্রান্তিক কৃষকরা। গত প্রায় চার বছর ধরে একইভাবে চলছে।
অন্যদিকে বাজারে গুঁড়াদুধের দামও অনেকখানি বেড়েছে। কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের বিউটি স্টোরের ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন জানান, গুঁড়াদুধের দাম আরও আগে থেকেই চড়তে শুরু করেছে। আগে ডিপ্লোমা দুধের এক কেজির প্যাকেট ৬১০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন তা ৬৪০ টাকায় বিক্রি করছি। একই ওজনের ডানো দুধের প্যাকেট বিক্রি করছি ৬১০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৫৮০ থেকে ৫৮৫ টাকা। কম দামের মধ্যে স্টারশিপ ব্র্যান্ডের এক কেজির প্যাকেট এখন ৪৩০ থেকে ৪৪০ টাকা। আগে যা বিক্রি করেছি ৪২০ টাকায়।
মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় বৈশাখী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. খোকন জানান, এলাকার দোকানে দাম একটু চড়া। বর্তমানে ডিল্পোমা ৬৫০ টাকা, ডানো ৬২০ টাকায় বিক্রি করছি। কোম্পানি দাম বাড়ালে আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়। কমে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।