স্বদেশ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সমর্থকদের হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদের আটকে অভিযান চলছে। অভিযান পরিচালনার স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
এর আগে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার শল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম। অন্য মামলার বাদী স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল।
মামলায় দিরাই থানার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর ও নাচনী এবং শাল্লা থানার হবিবপুর কাশিপুর গ্রামের ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়ছে, ঘটনার উস্কানীদাতা নাচনী গ্রামের বাসিন্দা সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার স্বাধীন মিয়াকে।
পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীর পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী হয়েছেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। এই মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জন আসামির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক জানান, পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার বাদী সাবইন্সপেক্টর (এসআই নিরস্ত্র) আব্দুল করিম। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে এবং গ্রামবাসীর পক্ষে আরেকটি মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ ও অনেককে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে র্যাবের মহাপরিচালক শাল্লার সন্তান চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াগাঁও গ্রাম পরিদর্শন ও প্রেসব্রিফিং করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি ও গ্রামবাসীকে নিরাপদে বসবাসের আশ্বাস দিয়েছেন। তার নির্দেশে গ্রামে অস্থায়ী র্যাব ও পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সমর্থকরা ১৭ মার্চ বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮ টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করেছে। এসময় গ্রামের পাঁচটি মন্দির ভাংচুর করা হয়। নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামের এক তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে মাওলানা মামনুল হককে কটাক্ষ করে কথিত স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সকাল ৯ টায় এই তাণ্ডব চালানো হয়।
এর আগে ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই স্টেডিয়ামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। অভিযোগ রয়েছে, এসময় ধর্মীয় উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা।