স্বদেশ ডেস্ক:
৭ হাজার ৪৪৫ জন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা অপ্রদর্শিত সম্পদের ঘোষণা আয়কর রিটার্নে জমা দিয়েছেন। এই ঘোষণা দিয়ে তারা ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কর দিয়েছেন। করোনার মধ্যেও অর্থনীতির মূলধারায় ফিরেছে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে তারা কালো টাকা সাদা করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, কর দিয়ে সাদা করা এসব অর্থের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না।
অপ্রদর্শিত আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর। শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থের ১০ শতাংশ হারে কর প্রদানের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন ২০৫ করদাতা। তারা শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ও ঋণপত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সুবিধা নিয়েছেন। তবে শেয়ারবাজারে এ অর্থ অন্তত এক বছর বিনিয়োগ করে রাখার শর্তের কারণে অনেকেই এ সুবিধার প্রতি আগ্রহী হননি।
মহামারীর কারণে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে আয়কর আদায়ে যে প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে উঠতে আয়কর দেওয়ার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছর পর্যন্ত করদাতারা আয়করবিধি অনুসারে তাদের অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণা করতে পারতেন। তবে সরকারের অন্য সংস্থা চাইলে এ আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। ফলে খুব কম মানুষই এ সুযোগ নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন। যার কারণে এবার এনবিআর আইনে পরিবর্তন এনে নতুন বিধান করেছে, এ আয়ের উৎস সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
নতুন বিধানের আওতায় করদাতারা জমি, ভবন ও ফ্ল্যাটসহ যে কোনো অঘোষিত সম্পত্তি এলাকার ওপর নির্ভর করে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবেন।
করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত আয়ের নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সম্পদের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চলতি অর্থবছর সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুযোগ দেয়। এ সুযোগে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন করদাতারা।
প্রসঙ্গত, এবারের বাজেট বলা হয়েছে- দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যে কোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। এর বাইরে বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে বিদায়ী অর্থবছর থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। সেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ করা অর্থের ১০ শতাংশ কর দিলেই প্রশ্ন করবে না এনবিআর। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ সুযোগ আছে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করা হয়। তবে দেশে ঘোষণা দিয়ে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়।
জানা গেছে, রাষ্ট্রের রাজস্বভা-ারকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার লক্ষ্যে সরকারের রাজনৈতিক নির্দেশনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করদাতাদের সঙ্গে আলোচনা ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সবার সহযোগিতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়করে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ করবর্ষের জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন; যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১,৫৪৫.০৯ কোটি টাকা বেশি।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও আয়কর প্রদান করেছেন করদাতারা। এ জন্য তিনি করদাতাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। এ ছাড়া মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।