স্বদেশ ডেস্ক: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের রহস্যজনক ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দলীয় প্রার্থীরা। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা একজোট হয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর অংশ হিসেবে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর আগে তারা নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইবেন।
চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিদ্রোহী বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ১২ জন বর্তমান কাউন্সিলরও নির্বাচন করছেন। বিদ্রোহীদের অধিকাংশই আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত রবিবার রাতে নগরীর অলঙ্কার মোড়ে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আবছারের বাসায় এ বৈঠক হয়। এতে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া
৩৪ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তবে মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী কেউ বৈঠকে ছিলেন না।
এর আগে মনোনয়নপ্রাপ্তরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গেও দেখা করেন। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- কার্যনির্বাহী কমিটির সভাস্থলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা অবস্থান নেবেন। প্রার্থীদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সদস্য তারা সভায় বিদ্রোহীদের সক্রিয় থাকার প্রসঙ্গ তুলবেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছ থেকে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইবেন।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া না গেলে মনোনয়নপ্রাপ্তরা এ সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দলের এক সভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের হুশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের কেউ একবার বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তিনি পরবর্তীতে আর নৌকায় উঠতে পারবেন না। হানিফের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মনোনয়নপ্রাপ্তরা।
৩৪ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে যাদের কাউন্সিলর প্রার্থী করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মাঠে যারা প্রার্থী হিসেবে আছেন, দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। তাদের পাশে নিয়ে ঘুরছেন। এতে তারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার বৈধতা পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যারা মনোনয়ন পেয়েছি, আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই। আর বক্তব্য না পেলে আমরা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ দফায় মনোনয়ন পাওয়া একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, মাঠে মনোনয়নপ্রাপ্তরাও থাকবেন, আবার বিদ্রোহীরাও থাকবেন, এতে তো ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হবে। আমাদের মেয়র প্রার্থীর ভোটের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা এভাবে বিশৃঙ্খল অবস্থায় নির্বাচন চাই না। আমরা চাই, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে এর একটা সুরাহা করা হোক।