স্বদেশ ডেস্ক: হাশিম আমলা হঠাৎ করেই বিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। না, এজন্য কোনো আক্ষেপ নেই তার। ৬ বছর বয়স থেকে ক্রিকেটকে তিনি উপভোগ করছেন। তাই এটিকে ছেড়েও যেতে পারছেন না। দুনিয়াজুড়ে খেলে বেড়াচ্ছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এবার তিনি এসেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল)। আর বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এসে তিনি জানালেন বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসার কথা। গতকাল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ফাঁকে নিজের ক্রিকেট জীবনের নানা দিক তুলে ধরে অকপটে।
শুরুতেই জানিয়ে দিলেন কেন এ দেশে আসতে তার ভালো লাগে। হাশিম আমলা বলেন, ‘বাংলাদেশে আসতে বরাবরই খুব ভালো লাগে। আগেও বেশ ক’বার এসেছি। এখানকার আবহ ভালো। ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি দুর্দান্ত, মাঠ সবসময়ই প্রাণবন্ত থাকে। অবসরের পর সময় ছিল অনেক। টি-টেন ক্রিকেট খেললাম। খুলনা টাইগার্সের সঙ্গে যোগাযোগ হলো, তারা জানতে চাইলো আমাকে পাওয়া যাবে কি না। সৌভাগ্যবশত এখন সময়টা ফাঁকা ছিল, চলে এলাম ।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে অনন্য এক প্রতিভার নাম হাশিম আমলা। ১২৪ টেস্টে ২৮ সেঞ্চুরি ও ৪১ ফিফটির মালিক তিনি। ১২৭ ওয়ানডেতে ২৭ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩৯টি ফিফটি রয়েছে তার ঝুলিতে। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন গেল বছর। আমলা বলেন, ‘আমি উপভোগ করছি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই রোমাঞ্চকর। যতটা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি সেজন্য কৃতজ্ঞ। এখন আরেকটি অধ্যায়। বিপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছি। এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার কারণে সেভাবে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এবার সময় এসেছে এবং এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। ফ্রাঞ্চাইজি লীগগুলোর মধ্যে বিপিএল অন্যতম। এটার আলাদা স্বাদ আছে। সেই অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছি আমি।’
অবসরে গিয়েও কেন ঘরোয়া আসরে খেলে যাচ্ছেন আমলা! অর্থ নাকি অন্যকিছু? তিনি বলেন, ‘আমি ৬ বছর বয়স থেকেই (ক্রিকেট উপভোগ করি)। ক্রিকেট মানে আনন্দ ও উপভোগের নাম। খেলাটাকে আমি ভালোবাসি।’
তার যে ফিটনেস তাতে চাইলে আরো বছর তিনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়ে দিতে পারতেন। তবুও কেন বিদায় বলেছেন? আমলা বলেন, ‘নাহ, আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই একটা সময় এটি অনুভব করে। শরীর যদিও বলছে, আরও কয়েক বছর খেলতে পারি, মানসিকভাবেও চাঙা আছি, কিন্তু সব কিছুরই একটা সময় আছে।’ টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের যে কোনো তরুণ ব্যাটসম্যানের জন্য অনুকরণীয় হাশিম আমলা। তবে আমলা বলেন, ‘না, টেস্ট ক্রিকেট মিস করছি না। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই খুশি, খুবই কৃতজ্ঞ। খেলাটায় আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটি ভাগাভাগি করতে সবসময়ই উপভোগ করি। এখন সময় নতুন অধ্যায়ের।’
বিপিএলের মাঝ পথে এলেও দলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া তার জন্য কঠিন নয় বলেই মনে করেন আমলা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এটি এমন কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। সবার সঙ্গে মিশে যেতে কয়েক দিন সময় লাগে। তবে মাঠে নামার সময় সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই থাকে, ম্যাচ জেতা। সেই লক্ষ্যে অটল থাকলে এমনিতেই মিশে যাওয়া যায় দলে। ১০ বছর ধরে আমরা পরস্পরের বিপক্ষে নানা সময়ে খেলেছি। মুশি (মুশফিকুর রহীম) অসাধারণ অধিনায়ক, কিপার-ব্যাটসম্যান। আশা করি ওর সঙ্গে সময় কাটানো হবে, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা হবে এবং আমরা দুজনই সেটির অপেক্ষায়। ক্যারিয়ারে অনেকদিন সাকিব-মুর্তজাদের (মাশরাফি) বিপক্ষেও খেলেছি।
‘ধর্মের সঙ্গে ক্রিকেটকে মেলানো কপটতা’
আমলা বলেন, এই প্রশ্ন আমার অনেক অনেকবার শুনতে হয়েছে। ইসলামের মূল ভিত্তিগুলো খুব সাধারণ এবং আপনাদের প্রায় সবাই সেটি জানেন। আমার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ব্যাখ্যা করাও কঠিন। এটি রুদ্ধ নয়, তবে সবকিছুই সংযুক্ত। অনেকে বলে ইসলাম কেমন, ক্রিকেটে আপনার ধর্ম কীভাবে সাহায্য করে। আমার কাছে প্রশ্নটি অদ্ভূত লাগে, কারণ সবাই নিজের জীবন সর্বোচ্চ পছন্দ করে। বাকি সবকিছু নিজের মতোই চলে। ক্রিকেটে সাহায্য করা বা না করার ব্যাপার এটি নয়। ব্যাপারটি হলো, নিজের বিশ্বাসের জায়গায় আমরা কতটা নিবেদন দিতে পারছি। নিজের ক্যারিয়ার বা জীবনে সেরাটা করতে পারাই আসল। ধর্ম ক্রিকেটে সহায়তা করে বা করে না, এরকম কিছু আমার ভাবনায়ও আসে না। ক্রিকেটে সাহায্য করতে পারে বলেই ইসলামের নানা কিছু করতে হবে, এরকম ভাবি না। সেটি বরং কপটতা হবে। আমি নিজের বিশ্বাসের চর্চা করার চেষ্টা করি সর্বোচ্চ, বাকি সবকিছু নিজের মতোই চলে।’