স্বদেশ ডেস্ক:
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকায় প্রায় ৬০ ও ঢাকার বাইরে ৪০ শতাংশ মানুষ রয়েছেন। এর আগে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় এত বিপুলসংখ্যক মানুষ কখনো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি। এদিকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে এডিস মশার উপস্থিতি ও ঘনত্ব নিশ্চিত হতে রোগতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জরিপ কাজ পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন। আইইডিসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা সারাদেশে থেকে ডেঙ্গু-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে চলেছেন। ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে ভাইরোলজি ল্যাবটেরিতে কাজ চলছে। চলতি বছর সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে বরিশালে। তাই বরিশাল জেলায় সরেজমিন জরিপ করার এবং রোগতত্ত্ব ও কীটতত্ত্ব বিশেষ গবেষণা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই গবেষণার অংশ হিসেবে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার উপস্থিতি ও ঘনত্ব, মশার প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী কারণ এবং ডেঙ্গু রোগের সম্ভাব্য সংক্রমণের হার বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। গবেষণাকাজ শুরু করতে একটি টিম বরিশালে রওনা দেবে।
জানা গেছে, এডিস মশা নিধনে নানা ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৯৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ঢাকার ১২টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৪১ প্রতিষ্ঠান থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হাসপাতালের বাইরে সারাদেশের ৬৪টি জেলা সিভিল সার্জনের অফিস থেকে তথ্য পাঠানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারাদেশে ১ হাজার ৫৯৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে ৭৬০ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৮৩৬ জন রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩ এবং আগস্টে ৪১ হাজার ১৩১ জন। এসব রোগীর ৫৩ হাজার ৩৯৮ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে। বাকি ৬ হাজার ১৪৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৪৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৫, জুলাইয়ে ২৮ এবং আগস্টে ১২ জন। তবে হাসপাতালগুলোর মৃত্যুর তথ্যমতে, এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি, যা প্রকাশ করছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর বাইরে ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৩৩, চট্টগ্রামে ১৩৯, খুলনায় ১৭৯, রংপুরে ৩৩, রাজশাহীতে ৭৩, বরিশাল বিভাগে ১৩৭, সিলেট বিভাগে ২০ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোয় এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে ২১ হাজার ২৯ জন বাড়ি ফিরেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৯৪ চিকিৎসকসহ ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী : সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৪ জন চিকিৎসক, ১৩০ জন নার্স এবং ৭৬ জন হাসপাতালকর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালটির ২৫ জন চিকিৎসকসহ ৬২ কর্মী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬ চিকিৎসক এবং ১২ জন নার্স রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
৪ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন (৪০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। এ ছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনির হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় যশোরের আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল গাফ্ফার (৫২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে আলমগীর হোসেন গাজী নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত কিশোর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীকলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।