সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

ফাঁকা মাঠে আ’লীগের গোল জেলা পরিষদে

ফাঁকা মাঠে আ’লীগের গোল জেলা পরিষদে

স্বদেশ ডেস্ক:

শাসকদল আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলনকে পাত্তা না দেয়ার কৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি নেতারা যেসব কাথাবার্তা বলছেন, সেটিকে হালকা করার জন্য নানা মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের হাঁটু ভাঙবে না, কোমরও ভাঙবে না। আওয়ামী লীগের জন্ম এই মাটিতে। আওয়ামী লীগ এই মাটি থেকে উঠে আসা দল। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। এই মাটিতে যার জন্ম তার কোমর ভাঙবে না। আমি ভুল করিনি, ফখরুল সাহেব ভুল করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত আলোচনা সভা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বাংলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সভায় ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আমি গত পরশুদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে বলেছিলাম কোমর ভাঙা বিএনপি, হাঁটু ভাঙা বিএনপি লাঠির ওপর ভর করেছে। দেখলাম বিএনপির ফখরুল সাহেব তার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নাকি হাঁটু ভেঙে গেছে। মির্জা ফখরুল হয় তো ভুলে গেছেন এটা আমার কথা না, এটা তাদের থিংকট্যাংক গণস্বাস্থ্যের ডা: জাফরউল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেছেন। বারবার তিনি বলেছেন কোমর ভাঙা বিএনপি, হাঁটু ভাঙা বিএনপি। আমি তাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দিলাম হাঁটু ভাঙা দল লাঠির ওপর ভর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অবদান তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্যোগে আলো হাতে আমাদের বর্ণিল ঠিকানা শেখ হাসিনা। তিনি ধ্বংস স্তূপের ওপর বারবার সৃষ্টির পতাকা উড়িয়েছেন। ১৩ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। এ দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা সহজ ছিল না। তিনি তা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে আমাদের পাপ মোচন করেছেন। জনগণের কল্যাণ ও ভাগ্যোন্নয়নের জন্যই শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ কমিটির সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যের সুরও ছিল প্রায় অভিন্ন।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি আজ শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজায় মন্দিরে মন্দিরে, মণ্ডপে মণ্ডপে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রকাশ্যে যতটা নিষ্ক্রিয় ভেতরে ভেতরে ততটা সক্রিয় আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগের বছরের বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার সরকার সতর্ক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মন্দিরে মন্দিরে, মণ্ডপে মণ্ডপে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে পাহারা দিতে হবে।

জেলা পরিষদে নির্বাচন ফাঁকা মাঠে গোল
নির্বাচন মানেই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, সাজ সাজ রব, ভোটের একটা আমেজ বিরাজ করে। হোক সেটা স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সেই ভোটের আগ্রহ উদ্দীপনায় বেশ ভাটা পড়েছে। আগামী ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদের নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী ৬১টি জেলায় অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনরা ৬০টিতে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে গতবারের মতো এবারো ফাঁকা মাঠে একাই গোল দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতোমধ্যে ২৭ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দি¦তাহীন এ নির্বাচনে মাত্র কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গতবার মনোনয়ন পেলেও এবার যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তাদের কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করছেন বলে জানা গেছে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেবল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের চার ধরনের জনপ্রতিনিধি এই নির্বাচনের ভোটার হবেন। আইনে বলা আছে, প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও সব কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কমিশনার এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব সদস্যের সমন্বয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে। আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোট দিতে পারেন না, যা অন্যান্য নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোট দিয়ে থাকেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়ে থাকে। ওই নির্বাচনগুলোতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইতে হয়। পোস্টার, ব্যানার লিফলেটসহ নানা প্রচারণার বিষয় থাকে। ভোট করতে গেলে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচন তার ব্যতিক্রম। এ নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা তেমন লাগে না। আর্থিক খরচও তেমন নেই। যার ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী তুলনামূলক একটু বেশি। এবার ৬১টি জেলায় ৫০০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। তার মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬০টি জেলায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। একটি মাত্র সাতক্ষীরায় মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবপর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও স্থানীয় সরকারের শুধু জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি ও তার মিত্ররা আনুষ্ঠাকিভাবে বয়কট করায় স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্যও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রার্থীর জয় অনেকটাই নিশ্চিত। ইতোমধ্যে কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, ঝালকাঠী, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট জেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে কোনো দলের অংশগ্রহণ করতে তো বাধা নেই। সে ক্ষেত্রে কোনো দল যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে অন্য প্রার্থীরা তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে- এটা স্বাভাবিক। অন্য দলের প্রার্থীরা নেই বলেই তো আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় এটা হতে পারে, এটা কোনো দোষের নয়। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন অনেকটা ঝামেলাহীন। এই নির্বাচন অন্যান্য নির্বাচনের মতো দলীয় প্রতীকে হয় না। তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা লাগে না। ফলে অনেকেই মনে করে, দলের মনোনয়ন পেলে সহজেই জয়ী হয়ে আসতে পারবে। হয়তো সে জন্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাটাও অনেক বেশি। এটাও ভালো দিক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, তবে দলের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মোটেও সমীচীন নয়। এটা করলে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণেরও আস্থা নেই, অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও আস্থা নেই। নির্বাচনে আস্থা নেই বলেই তো অন্য কোনো দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নাই সেটা কিভাবে নির্বাচন হয়? ৬১টি জেলার মধ্যে ২৭টি জেলায় যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি দলের প্রার্থী জয়লাভ করে তাহলে এটাকে কিভাবে নির্বাচন বলে? নির্বাচন মানেই তো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকতে হবে, ভোট হতে হবে। এখন আর ভোটেরও দরকার হয় না। তিনি বলেন, কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখানে টাকার ছড়াছড়ি ব্যাপকভাবে হয়। রাজনৈতিক প্রভাবটাও কাজ করে। ড. মজুমদার সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জেলা পরিষদের আইন যা আছে, সেটি একটি অথর্ব আইন। বেসিক ডেমোক্র্যাসি। এখানে ভোটার কেনাবেচা হয়। ফলে জেলা পরিষদের নির্বাচন হলো একটা প্রহসনের নির্বাচন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877