মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ
তাইওয়ান-চীন সঙ্কট ও বিশ্ব পরিস্থিতি

তাইওয়ান-চীন সঙ্কট ও বিশ্ব পরিস্থিতি

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ:

তাইওয়ান মূলত চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দক্ষিণ চীন সাগরের একটি দ্বীপ। এক সময় ওলন্দাজ কলোনি ছিল। তবে ১৬৮৩ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত চীনের রাজারাই শাসন করেছেন তাইওয়ান। এরপর জাপানিরা দখল করেছে এই দ্বীপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়া হয় চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বাধীন চীনা সরকারের হাতে। ১৯৪৯ সালে চীনে মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হারতে থাকে চিয়াং কাইশেকের সরকার। চীনের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এরপর চিয়াং কাইশেক আর তার কুওমিনটাং সরকারের লোকজন তখন পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় তাইওয়ান দ্বীপে। সেখানে তারা ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামে এক গণতন্ত্রপন্থী সরকার গঠন করে।

নিজেদের সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার বলেও দাবি করে তারা। একদিন কমিউনিস্টদের কাছ থেকে পুরো চীনের নিয়ন্ত্রণ তারা নেবে, এমনটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের অনেক দেশ চিয়াং কাইশেকের সরকারকেই চীনের সত্যিকারের সরকার হিসেবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বীকৃতি দিয়েছিল। পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ১৯৭১ সালে মাও সে তুং-এর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্টপন্থী চীনের সরকারকে ‘আসল চীনের সরকার’ বলে স্বীকৃতি প্রদান করে নিরাপত্তা পরিষদের পঞ্চম অক্ষ শক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেয় জাতিসঙ্ঘ। তারপর থেকে একে একে বিশ্বের প্রায় সব দেশই চীনের পক্ষ নেয় এবং তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কমতে থাকে। কিন্তু আমেরিকা তাইওয়ানের পক্ষে সমর্থন ও কূটনীতিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর দৃঢ় করতে থাকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান-চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কট, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কট, সৌদি আরব-ইয়েমেন সঙ্কট, উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া সঙ্কট, তালেবান সঙ্কট ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইত্যাদি সঙ্কটে বিরাজমান বিশ্বপরিস্থিতি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তাইওয়ানকে নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বিশ্বের দুই পরাশক্তির অবস্থান। এক দিকে রয়েছে গণতন্ত্রের পূজারী যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে কমিউনিস্ট পূজারী চীন। সম্প্রতি চীনের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি স্বশাসিত তাইওয়ান দ্বীপটি ভ্রমণ করেন। চীন পেলোসির এ সফরকে তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও এক চীন নীতির বিরুদ্ধে উসকানি বলে মনে করছে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং তাইওয়ানে আকাশপথ ও জলসীমায় বড় আকারের সামরিক মহড়া চালিয়েছে। তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়াকে উসকানিমূলক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলেছে হোয়াইট হাউজ। অন্য দিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাইওয়ান প্রণালীতে ‘চীনের সার্বভৌমত্ব, সার্বভৌম অধিকার ও আইনগত এখতিয়ার রয়েছে।

ন্যান্সি পেলোসির সাম্প্রতিক তাইওয়ান সফর নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সামরিক পর্যায়ে আলোচনা, আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনের প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে চীন। শুরু থেকেই তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল বলে মনে করে চীন। চীনের বক্তব্য হচ্ছে ‘এক চীন’ নীতির ভিত্তিতে এক দেশ দ্বৈত শাসনব্যবস্থা মেনে চললে চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযানে যাবে না। যদি তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা করে তাহলে চীন সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি চীন শ্বেতপত্রে প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য ব্যাপক পরিসর তৈরি করতে প্রস্তুত। তবে আমরা কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার সুযোগ দেবো না।’

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মে মাসে জাপানে কোয়াড সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় এক প্রেস কনফারেন্সে তাইওয়ান ইস্যুতে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, চীন প্রতিবেশী তাইওয়ানে সামরিক হামলা চালালে চুপ করে বসে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানকে রক্ষায় প্রয়োজনে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শুরু হলে তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে চীন বলেছে, তাদের জনগণের দৃঢ়সঙ্কল্প ও সক্ষমতাকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারেন না। আগে থেকেই তাইওয়ানের কাছে আধুনিক সমরাস্ত্র বিক্রি করে আসছেন মার্কিনিরা। তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসির সফরের মধ্য দিয়ে চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক আরো তিক্ততার দিকে গেছে। বেইজিং পেলোসির এই সফরকে ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছে। চীনের সামরিক মহড়া তাইওয়ানের চার পাশে ঘিরে থাকা ছয়টি বিপজ্জনক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অঞ্চল তাইওয়ানের জলসীমার ভেতরে পড়েছে।

তাইওয়ানের অভিযোগ, চীনের এই পদক্ষেপ তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে, এটি অবরোধের সমান। ভবিষ্যতে ব্যাপক সাইবার হামলার আশঙ্কাও করছে তাইওয়ান। বলতে গেলে, সব কিছু মিলিয়ে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালেও চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল। সে বছর তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা সীমানায় একাধিকবার চীনা যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করেছিল অক্টোবরে। বর্তমান উত্তেজনার মধ্যেও চীনের যুদ্ধবিমান একাধিকবার তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ৪০ বছরের মধ্যে চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।

এশিয়ায় পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা চীনকে দক্ষিণ চীন সাগরে ঠেকাতে ভ‚রাজনীতি ও কৌশলগতভাবে তাইওয়ান আমেরিকার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। তাইওয়ানকে হাতছাড়া না করতে তাদের স্বাধীন অস্তিত্বের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব প্রমাণের জন্যই ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেছেন। কারণ আমেরিকা জানত চীন এই সফর ভালোভাবে নেবে না। চীনকে ক্ষেপিয়ে তোলাই ছিল তার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমেরিকা সফল। চীন ক্ষিপ্ত হয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড এটাই প্রকাশ করছে। তাইওয়ানের ব্যাপারে আমেরিকা যত দিন পর্যন্ত একটা ‘ধোঁয়াশা’ নীতি নিয়ে ছিল তত দিন ভূখণ্ডটি মোটামুটি শান্তিতে ছিল। চল্লিশ বছর ধরে তাইওয়ান প্রণালীতে মোটের ওপর শান্তি বজায় থেকেছে। টেনশন হয়েছে কিন্তু যুদ্ধ হয়নি।

এখন আমেরিকা রাখঢাক বাদ দিয়ে তাইওয়ানের ‘সার্বভৌমত্ব’ নিয়ে বেশি বেশি মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। এতেই আবার নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাইওয়ানও কি ইউক্রেন হয়ে উঠবে? আমেরিকার বিশেষজ্ঞরা নাকি তাইওয়ানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন। তাইওয়ানের মানুষ কিন্তু মনে করেন তাদের প্রতিরক্ষার প্রধান উপাদান যুদ্ধজাহাজ নয়। তা হলো তাদের ‘চিপ’ শিল্প। চিপ এখন কোথায় না লাগে? মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে সামরিক বিমান, ড্রোন, কম্পিউটারসহ অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তিতে চিপের ব্যবহার করতে হয়। ইউক্রেন যেমন গোটা পৃথিবীতে গম আর ভোজ্যতেল সরবরাহ করে, তাইওয়ানের ওই ছোট্ট দ্বীপে তৈরি হয় সারা বিশ্বে অধিক ব্যবহৃত ও অতি প্রয়োজনীয় চিপ বা সেমি কন্ডাক্টরের প্রায় ৯০ শতাংশ।

তাইওয়ান আক্রান্ত হলে জাপানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহ্যগতভাবেই চীন জাপানকে শত্রু দেশ মনে করে তার এক তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব হিউমিলিয়েশন’-এর সময় ব্রিটেনের সাথে জাপানের ভূমিকার জন্য (তাইওয়ান, মাঞ্চুরিয়া দখল; নানকিং হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি)। আছে সাম্প্রতিক সমুদ্রসীমা বিরোধও। জাপানের একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থান মনুষ্য-বসতিহীন সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের।
জাপানের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব দ্বীপের মালিকানায় অবশ্য চীনেরও জোর দাবি আছে (চীনের ভাষায় ডাউইউ দ্বীপপুঞ্জ)। মনুষ্যবসতি না থাকলেও এই দ্বীপপুঞ্জ যে দেশের অধিকারে যাবে, সে দেশ যে সমুদ্রসীমার অধিকারী হবে, সেটা মৎস্য এবং খনিজসম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। সার্বিক পরিস্থিতিতে গত বছরের জুলাই মাসে জাপান তার একটি সামরিক কৌশলপত্রে খুব স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, একটি মুক্ত এবং নিরাপদ এশিয়া প্যাসিফিকের জন্য তাইওয়ানের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। চীন যদি তাইওয়ানকে আক্রমণ করে, তবে জাপানকে অবশ্যই তাইওয়ানের পক্ষে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে নিজেদের অভিন্ন আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য।

পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেই পটভূমিতে বাংলাদেশ এক চীন নীতির অবস্থানে অটল থাকার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে বাংলাদেশ সংশ্রিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনার নিরসন চাইছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অব্যাহতভাবে ‘এক চীন মতাদর্শ’ মেনে চলবে। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এমন এক সময়ে ঢাকায় এলেন, যখন তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের (জিএসআই) মতো উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন। চীন এসব উদ্যোগে বাংলাদেশকে পাশে চায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না, তা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটি একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক। নিয়ম অনুযায়ী তারা যেটা বলেছেন, তা জনসমক্ষে কতটা আনা হবে, সেটা তাদের বিষয়। অবশ্যই এ ব্যাপারে (তাইওয়ান, জিডিআই ও জিএসআই) বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।

গত ০৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে চীনা মন্ত্রী তাইওয়ানের প্রসঙ্গ উঠালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘এক চীন’ নীতির প্রশ্নে অটল থাকার আশ্বাস দেয়া হয়। ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব এহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীনের সাথে বন্ধুত্বকে মূল্য দেয় বাংলাদেশ এবং এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করে।’

উল্লেখ্য, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী। যেহেতু চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বড় অংশীদার। বর্তমানে চীনের অর্থায়নে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

উপরের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের সমর্থনের বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মৌলিক দিকটি প্রতিফলন ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশ প্রতিবেশী কোনো দেশের সাথে যুদ্ধ বা সঙ্ঘাতে বিশ্বাসী নয়। এ ক্ষেত্রে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এক সময়ে চীনের অংশ হিসেবে তাইওয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের এক অর্থে চীনের নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমর্থনের বিষয়ে অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া বা অসন্তুষ্টিকে বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতে আমলে নেবে না। বর্তমানে চীন সামরিক এবং অর্থনৈতিক দু’দিক দিয়েই আমেরিকার জন্য প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ সোভিয়েত ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জের চেয়ে অনেক বড়। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপুল সামরিক শক্তি থাকলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে তারা ছিল আমেরিকার তুলনায় একেবারে দুর্বল। চীন বর্তমানে পিপিপি ডলারে আমেরিকার চেয়ে বড় অর্থনীতি আর বছর দশেক পর ডলারের হিসাবেই আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবার পূর্বাভাস আছে। চীন-আমেরিকা প্রতিপক্ষ হলেও উভয়ে পারস্পরিক বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও বটে। বর্তমান বাস্তবতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তাইওয়ান ইস্যুতে বড় একটি যুদ্ধের ব্যয় বহনের জন্য আমেরিকা প্রস্তুত নয়। অপর দিকে চীন সামরিক শক্তির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এখনো পিছিয়ে রয়েছে।

চীন ২০৩৮ সালের মধ্যে এক নম্বর সমরশক্তি হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সার্বিক বিশ্লেষণে মনে হয় তাইওয়ান ইস্যুতে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে চীন-আমেরিকা যদি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, সেটা নিশ্চিতভাবেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, তাইওয়ান যদি আপসকামী মনোভাব প্রদর্শন না করে তাহলে চীনের জন্য যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877